পরিবেশ-কেন্দ্রিক অপরাধের ব্যবসায় লাভও প্রথম সারিতে! জানাচ্ছে ইন্টারপোল

পরিবেশ দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশ্ব উষ্ণায়ন— এই তিনটি বিষয়কেই ভবিষ্যতের মূল সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করেছেন বিশ্বের গবেষকরা। এমনকি মানব সভ্যতাকে ধ্বংসের মুখেও ঠেলে দিতে পারে জলবায়ু পরিবর্তন, সেই সতর্কতাও জারি করেছেন তাঁরা। বিশ্বের প্রতিটি দেশই কম-বেশি পদক্ষেপ নিয়েছে কার্বন নির্গমন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। অথচ, এর পাশাপাশিই পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে পরিবেশ-কেন্দ্রিক অপরাধ (Environmental Crime)। এমনকি বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ লাভজনক ‘অবৈধ ব্যবসা’-র (Illegal Business) রূপ নিয়েছে ‘এনভায়রনমেন্টাল ক্রাইম’।

হ্যাঁ, সম্প্রতি এমনটাই জানালেন ইন্টারপোলের পরিবেশ নিরাপত্তা কর্মসূচির কর্মকর্তা তথা ‘পরিবেশ অপরাধ’ গোয়েন্দা সাসা ব্রাউন। মাদক পাচার ও ভুয়ো পণ্যের ব্যবসার পর, অবৈধ ব্যবসার জগতে তৃতীয় স্থান দখল করেছে পরিবেশ-কেন্দ্রিক অপরাধ। জার্মান সাংসদদের সঙ্গে একটি যৌথ আলোচনার সময় সাংবাদিক সম্মেলনে এই বক্তব্য পেশ করেন সাসা ব্রাউন। অবৈধ খনন থেকে শুরু করে অবৈধ কাঠ চালান, বর্জ্য নিষ্পত্তি, রাসায়নিক দ্রব্যের বেআইনি উৎপাদন ও নিষ্কাশন, এবং পশু শিকারের মতো বিষয়গুলিতে সবচেয়ে বেশি মুনাফা অর্জন করেছে পরিবেশ অপরাধীরা। এমনটাই জানাচ্ছেন সাসা। বিশেষত, পশ্চিমি দুনিয়ায় প্রকৃতির ওপর অস্বাভাবিকভাবে থাবা বসিয়েছে অবৈধ ‘পরিবেশ ব্যবসায়ী’-রা। 

জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি অর্থের ইউএনইপি-র রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৬ সাল থেকে কেবল অবৈধ আবর্জনা পাচারের জন্য ‘পরিবেশ অপরাধী’-দের পকেটে ঢুকেছে ১০-১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ, অবৈধ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবসা এখন ছাপিয়ে গেছে মাদক পাচারকেও। তাছাড়া ২০২০-২০২১ সালের মধ্যে অবৈধ বৃক্ষচ্ছেদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৩০ শতাংশ। এমনকি বৈশ্বিক বাজারে বেড়েছে অবৈধ কাঠের মূল্যও। জার্মান অ্যাসোসিয়েশন অফ ইঞ্জিনিয়ার্সের রিপোর্ট অনুযায়ী, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ক্রান্তীয় দেশগুলিতে অন্ততপক্ষে ৯০ শতাংশ বাড়তে চলেছে বননিধনের পরিমাণ। যা, গোটা বিশ্বের জলবায়ুতে বড়ো পরিবর্তন আনতে পারে বলেই আশঙ্কা গবেষকদের। 

কিন্তু কোনোভাবেই কি ঠেকানো সম্ভব নয় এই অপরাধ? জাতিসংঘের রিপোর্ট জানাচ্ছে, পশ্চিমি দেশগুলির আইনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে আছে, কাঠের ব্যবসার ক্ষেত্রে, উৎপত্তির প্রমাণ হিসাবে বিশেষ সার্টিফিকেট দেখাতে হয় ব্যবসায়ীদের। ফলে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কিংবা ল্যাটিন আমেরিকা থেকে অবৈধ কাঠ আনা হলেও তা বাজেয়াপ্ত হত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের কাঠ মাফিয়াদের সঙ্গে জুটি বেঁধে ইউরোপীয় অপরাধীরাও। চলছে ‘লেবেল’ জালিয়াতির চক্র। কাজেই, এই অপরাধ দমন করাই এখন বড়ো চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে প্রশাসনের কাছে। পরিবেশের এই অবক্ষয় রুখতে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত পুলিশ, কাস্টমস আধিকারিক ও বিচারকদের নিয়ে ইউরোপ-জুড়ে একাধিক অপরেশন সেন্টার গড়ে তোলার পরামর্শ দিচ্ছেন সাসা ব্রাউন। এখন দেখার, আন্তর্জাতিক মঞ্চে কত দ্রুত গৃহীত হয় তাঁর এই প্রস্তাব…

Powered by Froala Editor