বিধ্বংসী টাইফুন থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন!

জীবাশ্ম জ্বালানির ভাণ্ডার শেষ হয়ে আসছে, তার ওপরে বাড়তি সমস্যা পরিবেশ দূষণ। এই পরিস্থিতিতে অচিরাচরিত শক্তিই ভবিষ্যত। আর প্রকৃতির শক্তিও তো নেহাৎ কম নয়। এক একটি দুর্যোগে শহরের পর শহর তছনছ হয়ে যায়। কিন্তু এই শক্তিকেই যদি বিদ্যুৎ উৎপাদনের (Energy Production) কাজে লাগানো যায়? না না, কল্পবিজ্ঞানের গল্প নয়। বরং বাস্তবেই এমন প্রযুক্তি নিয়ে এসেছেন জাপানের (Japan) ইঞ্জিনিয়াররা। টাইফুনের (Typhoon) মতো শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় থেকেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করে দেখিয়েছেন তাঁরা। খুব তাড়াতাড়ি জাপানের একাধিক শহরে এমন বায়ুকল বসানোর পরিকল্পনাও চলছে।

২০১৪ সালে ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুর্ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল বিকল্প পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার অবশ্যই কমাতে হবে, কিন্তু পরমাণু বিদ্যুৎ কোনো বিকল্প নয়। ঠিক এই সময়েই ‘চ্যালেনার্জি’ নামে একটি সংস্থা তৈরি করেন জাপানি ইঞ্জিনিয়ার আৎসুসি সিমিজু। সিমিজু বুঝেছিলেন, বায়ুবিদ্যুতেই ক্ষতির সম্ভাবনা সবচেয়ে কম। কিন্তু তার উৎপাদন ক্ষমতা খুব বেশি নয়। তাছাড়া, জাপানের মতো দেশে বছরে অন্তত ২৬টি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ে। এর মধ্যে অন্তত ৩-৪টি টাইফুন তো থাকেই। ফলে বায়ুকল বসানোর ঝুঁকিও বিস্তর। ঝড়ের সময় তো সেগুলো সরিয়ে নিয়ে যেতেই হয়। কিন্তু যদি এমন কোনো বায়ুকল বানানো যায়, টাইফুনেও যার কোনো ক্ষতি হবে না! তাহলে শুধু যে সমস্যার সমাধান হয় তাই নয়, সেইসঙ্গে টাইফুনে বিধ্বংসী শক্তি থেকেই বাড়বে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণও।

দীর্ঘ পরীক্ষানিরীক্ষার পর ফিলিফাইন্সের বাটানেস শহরে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে বসানো হয় চ্যালেনার্জির তৈরি বায়ুকল। আর এর কিছুদিনের মধ্যেই বাটানেস শহরে আছড়ে পড়ল টাইফুন কিকো। প্রতি ঘণ্টায় তার গতিবেগ ছিল ২৪৯ কিলোমিটার। ১৯৮৭ সালের পর থেকে ফিলিপাইন্সে যত টাইফুন আছড়ে পড়েছে, কিকো তাদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শক্তিশালী। স্বাভাবিকভাবেই এটি একটি চ্যালেঞ্জ ছিল চ্যালেনার্জির বায়ুকলের সামনে। তবে পরীক্ষায় সফলভাবেই উত্তীর্ণ হন জাপানি ইঞ্জিনিয়াররা। বায়ুকলের কোনো ক্ষতি হয়নি। বরং ঝড়ের মধ্যেই ১১ কিলোওয়াট-আওয়ার বিদ্যুৎ তৈরি করে একটিমাত্র বায়ুকল।

তবে ফিলিপাইন্সের প্রথম পরীক্ষার পরে বেশ কিছু ছোটোখাটো সীমাবদ্ধতাও নজরে আসে। সেগুলি শুধরে নিয়ে এখন সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত এই বায়ুকল। জাপান তো বটেই, প্রশান্ত মহাসাগরের তীরবর্তী সমস্ত দেশেই এই প্রযুক্তি আগামীদিনে গুরুত্বপূর্ণ শক্তিউৎস হয়ে উঠবে বলে আশাবাদী সিমিজু এবং তাঁর সহকর্মীরা।

আরও পড়ুন
কয়লার যোগান নেই, তবু অচিরাচরিত শক্তিতে অনাগ্রহী কেন্দ্র!

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
দুর্গাপুজোয় খরচ ১৭ টাকা, শক্তি-আরাধনা করেই কপাল ফিরল সাহেবের