বাংলার বুকে আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব, আয়োজনে নৈহাটির ‘রঙ্গসেনা’

“কোভিড পিরিয়ড যখন চলছে, আমরা সকলে গৃহবন্দি, সেইসময় অনলাইনে প্রথম আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব আয়োজন করেছিলাম আমরা। সাউথ এশিয়ান থিয়াটার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডঃ তাপস দাসের দৌলতে আমরা ইতালি এবং প্যারাগুয়ের নাট্যদলের সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ পেয়েছিলাম।”

বলছিলেন দেবব্রত ঘোষ। নৈহাটির (Naihati) ‘রঙ্গসেনা’ (Rangasena) নাট্যদলের সভাপতি তিনি। হ্যাঁ, কলকাতা সংলগ্ন মফস্‌সলের এই নাট্যদলের উদ্যোগেই বছর দুয়েক আগে আয়োজিত হয়েছিল এক অভিনব আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব। অনলাইনেই নাট্য পরিবেশন করেছিলেন দেশ-বিদেশের শিল্পীরা। সময় গড়িয়েছে। কমেছে করোনাভাইরাসের প্রকোপ। এবার ডিজিটাল দুনিয়া থেকে বেরিয়ে, প্রথমবার মঞ্চে আয়োজিত হতে চলেছে ‘রঙ্গসেনা’-র তৃতীয় আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব ‘রঙ্গোৎসব’।

গত ১৬ জানুয়ারি বিজয়নগরের ‘চা’-তে আয়োজিত হয়েছিল ‘রঙ্গসেনা’-র প্রেসমিট। সেখানেই প্রকাশ্যে আসে চলতি বছরের নাট্যোৎসবের পূর্ণাঙ্গ সূচি। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকেই নৈহাটির ঐকতান মঞ্চে শুরু হতে চলেছে রঙ্গসেনার চারদিন-ব্যাপী এই আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব। চলবে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। 

গতবছরের মতো এ-বছরও এই নাট্যোৎসবে হাজির থাকছে ভারত ছাড়া ৪টি দেশ— শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ইতালি। দেবব্রতবাবু যোগ করলেন, “বাংলাদেশের নাটক সচরাচর আমরা দেখতে পাই। তবে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা কিংবা অন্যান্য দেশের নাটক দেখার সৌভাগ্য হয় না বাঙালির। আর সেই কারণেই আমরা এ-ধরনের নাট্যোৎসব আয়োজনে বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়েছি।”

হ্যাঁ, এ এক অভিনব উদ্যোগই বটে। আরও জানা গেল, বাংলাদেশের নাটকটি বাংলা ভাষায় এবং পাকিস্তানের নাটকটি উর্দুতে হলেও, শ্রীলঙ্কা ও ইতালির নাটকটি হবে ইংরাজি ভাষায়। দর্শকদের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নাট্যকর্মীদের। অন্যদিকে মনীষ মিত্রের নির্দেশনায় সুন্দরবন উন্নয়ন নাট্যোৎসব উপস্থাপন করবে ‘দেবী’। হাজির থাকবে কলকাতা এবং হায়দ্রাবাদের দুটি নাট্যদলও।

‘রঙ্গসেনা’-র কর্ণধার ও অন্যতম সদস্য ধ্রুপদ ঘোষ জানান, “চলতি বছরে আমরা বিশেষ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করছি বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব পিটার ব্রুক এবং শাঁওলি মিত্রকে।” জানা গেল, শাঁওলি মিত্রের নামানুসারেই মঞ্চের নাম রাখা হয়েছে ‘শাঁওলি মঞ্চ’। অন্যদিকে দিন চারেকের জন্য নৈহাটি হয়ে উঠছে ‘পিটার ব্রুক নগর’। 

অবশ্য শুধু নাটক প্রদর্শনীই নয়, চারদিন-ব্যাপী এই নাট্যোৎসবে থাকছে রবীন্দ্রসঙ্গীত, বাংলার ঐতিহ্যবাহী ছৌ-নাচ, লোকগীতি, সেমিনার এবং একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎকার। সবমিলিয়ে এ যেন এক সব পাই-এর দুনিয়া। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে, কলকাতা তো বটেই, গোটা বাংলাজুড়েই বিভিন্ন জায়গায় আয়োজিত হয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। প্রদর্শিত হয় জানা-অজানা তরুণতুর্কি পরিচালকদের ছবি। অথচ, এই দৃশ্য অনুপস্থিত নাট্যজগতে। রঙ্গসেনার অভিনব এই উদ্যোগ বদল আনতে চলেছে সেই পরিমণ্ডলেরই… 

Powered by Froala Editor