পার্কের বেঞ্চে রাত কাটানো নিক মোকুটার আজ মিলিয়নেয়ার

আমেরিকার বুকে যখন পা রেখেছিলেন, তখন সঙ্গে ছিল মাত্র ৫০০ ডলার। সম্পূর্ণ অচেনা একটা দেশ, এমনকি ইংরেজি ভাষাটাও তখনও রপ্ত হয়নি নিকের। নেই মাথা গোঁজার মতো জায়গাও। তবু হাল ছাড়েননি ২১ বছরের সেই যুবক। ১৬ বছর পর আজ তিনি একজন মিলিয়নেয়ার (Millionaire)। শুধু তাই নয়, অনলাইন বাণিজ্যের একজন পথিকৃতও তিনি। রোমানিয়ার যুবক নিক মোকুটার (Nick Mocuta) হাত ধরে এই নতুন ব্যবসায় পা বাড়াচ্ছেন অনেকেই।

রোমানিয়ার একটি ছোট্ট শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে নিক। বাবা ছিলেন একটি বেসরকারি সংস্থার অ্যাকাউন্টেন্ট। মা স্কুল শিক্ষিকা। কিন্তু এই গণ্ডিতে নিজেকে বেঁধে রাখতে চাননি নিক। বিজনেস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়তে পড়তেই তাঁর মনে হয়, অনলাইন ব্যবসাই ভবিষ্যত হতে চলেছে। তবে রোমানিয়ার মতো দেশে তখনই তার কোনো সম্ভাবনা নেই। তার জন্য আমেরিকা বা অন্য কোনো উন্নত দেশে যেতে হবে। কিন্তু সেখানে পৌঁছতেও তো যথেষ্ট পুঁজির দরকার। স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ হতেই একদিন নিককে ডেকে তাঁর হাতে কিছু অর্থ তুলে দিলেন ঠাকুমা। তার থেকে বিমানের টিকিট কাটার পর আর মাত্র ৫০০ ডলার পড়ে ছিল। রোমানিয়ার মতো দেশে তাই অনেক। কিন্তু আমেরিকার অর্থনীতি সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ কোনো ধারনাই ছিল না নিকের।

লস অ্যাঞ্জেলস বিমানবন্দর থেকে শহরে পৌঁছাতে ক্যাবের ভাড়াই লেগে যায় ১০০ ডলার। এইটুকু রাস্তার ক্যাবভাড়া এত বেশি! অবাক হয়েছিলেন নিক। হাতে তখন আর মাত্র ৪০০ ডলার। একটা ছোট ঘর ভাড়া নিতে গেলেও এক মাসের বেশি চলবে না। তাই বাধ্য হয়েই রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে থাকলেন নিক। রাত কাটত পার্কের বেঞ্চে। সারাদিনে ছোটো একটি বার্গার খেয়েই থাকতে হত। আর চলত কাজ খোঁজার সংগ্রাম। সেটাও এক চ্যালেঞ্জ। ইংরেজি ভাষায় কথা বলাটা তখনও রপ্ত করতে পারেননি শেষ পর্যন্ত একটি গ্যারেজের কাজ পেলেন নিক। আয় সামান্যই। তবে তার পরেও ঘরভাড়া নিলেন না নিক। বরং সেই সামান্য মাইনে থেকেই শুরু করলেন সঞ্চয়। এভাবে কয়েক বছর চলার পর একদিন অনলাইন মার্কেট ইবে-তে একটি মার্চেন্ডাইস কিনলেন নিক। চিনের নানা ইলেক্ট্রনিক পণ্য কিনে সেগুলি আমেরিকায় বিক্রি করতে শুরু করলেন। মাস ছয়েকের মধ্যেই দেখা গেল, মাসে অন্তত ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার ডলার আয় হচ্ছে এই ব্যবসায়।


আরও পড়ুন
পক্ষাঘাত থেকে ফিরে সাঁতারের প্রশিক্ষক, অনুপ্রেরণার অন্য নাম ক্লিফ ডেভরিস

এখন আমাজন, ওয়ালমার্ট সহ প্রতিটা প্রথম সারির অনলাইন বাণিজ্যিক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত নিক। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৪০ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে আমেরিকা ও রোমানিয়ায় শতাধিক বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ছাড়াও রয়েছে চারটি বিলাসবহুল গাড়ি। তাঁর বাবা-মাকেও রোমানিয়া থেকে আমেরিকায় নিয়ে এসেছেন। তবে যে ঠাকুমার সাহায্য নিয়েই এই জীবনে পা রেখেছিলেন, তিনি মারা গিয়েছেন আগেই।

আরও পড়ুন
পূরণ হয়নি নিজের স্বপ্ন, আজ বহু মহিলার অনুপ্রেরণা সেই বঙ্গতনয়াই

নিজের ব্যবসার উন্নতির পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মকে ব্যবসায় উৎসাহও দিচ্ছেন নিক। কখনও কখনও তাঁদের বিনা সুদে অর্থ ধার দিয়েছেন, যাতে তাঁরা ব্যবসা শুরু করতে পারেন। কীভাবে ব্যবসাকে বাড়িয়ে তোলা যায়, তাই নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করেছেন। পার্কের বেঞ্চে শুয়ে থাকা জীবন থেকে আজকের নিকের এই স্বপ্নের উড়ান সত্যিই বিস্ময়কর।

আরও পড়ুন
অনুপ্রেরণায় দশরথ মাঝি, ‘মরুভূমি’কে একা হাতে অরণ্যের চেহারা দিলেন বিহারের ব্যক্তি

Powered by Froala Editor