সেনাবাহিনীতে নিয়োগের জন্য কুমারীত্ব পরীক্ষা! ইন্দোনেশিয়ার ঘৃণ্য প্রথার ইতি

পুরুষ হোক কিংবা নারী— যে কোনো দেশের সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে গেলে শারীরিক সক্ষমতার পরিচয় দিতে হয় সকলকেই। তবে মহিলাদের জন্য ইন্দোনেশিয়ার নিয়ম খানিকটা আলাদা। শারীরিক সক্ষমতাই সেখানে একমাত্র বিচার্য বিষয় নয়। সেনাবাহিনীতে অংশ নিতে গেলে বাধ্যতামূলকভাবেই তাঁদের প্রমাণ দিতে হয় কুমারীত্বের। আর সেই পরীক্ষাও হয় অত্যন্ত বর্বরোচিত পদ্ধতিতে। এবার অবসান হতে চলেছে বেশ কয়েক দশক ধরে চলে আসা এই বর্বর প্রথার। সম্প্রতি এমনটাই ঘোষণা করলেন ইন্দোনেশিয়ার সেনাপ্রধান আন্দিকা পেরকাসা। 

বিশ্বের অধিকাংশ উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশেই কুমারীত্ব পরীক্ষা আইনত অপরাধ। তবে ইন্দোনেশিয়ায় এতদিন ধরে বহাল তবিয়াতেই চলে আসছে এই প্রথা। সেনাবাহিনীতে নাম নথিভুক্ত করার পর, মহিলাদের প্রথমেই এই নারকীয় পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হত ইন্দোনেশিয়ায়। যোনীতে একাধিক আঙুল ঢুকিয়ে দেখা হত তাঁদের হাইমেন অক্ষত রয়েছে কিনা। আর অনেকাংশেই এই পরীক্ষার দায়িত্বে থাকতেন পুরুষরা। শুধু সেনাবাহিনীতে যোগাদানে ইচ্ছুক মহিলারাই নয়, অনেক সময় সেনাকর্তাদের বিবাহের সময় পাত্রীকেও এই একই পদ্ধতিতে দিতে হয় কুমারীত্বের প্রমাণ। 

ইন্দোনেশিয়ার এই নারকীয় প্রথা যে কোনো নারীর কাছে শুধু কষ্টকরই নয়, পাশাপাশি তা সমানভাবে নিপীড়নমূলক এবং অপমানজনক। প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে একাধিক মানবাধিকার ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিবাদ করে আসছেন সরকারের মদতপুষ্ট এই হিংস্র কার্যকলাপের বিরুদ্ধে। ২০১৪ সালে ইন্দোনেশিয়ার এই ঘৃণ্য প্রথার পর্যালোচনা করে একটি বিশেষ রিপোর্টও প্রকাশ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয়েছিল কুমারীত্ব পরীক্ষার এই কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে অবৈজ্ঞানিক এবং ভিত্তিহীন। হাইমেন অক্ষত থাকার সঙ্গে যৌন সংসর্গের কোনো যোগ নেই— সেই বিষয়টিতে বিশেষভাবে জোর দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট। বরং, ঘৃণ্য এই পরীক্ষা যে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে মহিলাদের, জানিয়েছিল আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। কিন্তু তারপরেও প্রশাসনের টনক নড়তে কেটে গেল দীর্ঘ ৭ বছর। 

এবার থেকে আর সেনাবাহিনীতে অংশ নিতে গেলে শুধুমাত্র শারীরিক সক্ষমতার যোগ্যতা যাচাই করা হবে বলেই সম্প্রতি ঘোষণা করেন ইন্দোনেশিয়ার সেনাপ্রধান। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে সরকারি নোটিশ জারি করা হবে বলেও জানিয়েছে তিনি। দীর্ঘদিনের এই প্রথার অবসানে নারীনির্যাতনের একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হল বলেই মনে করছেন সেদেশের মানবাধিকারকর্মীরা। তবে এখনও সমাজ সম্পূর্ণ বৈষম্যমুক্ত হয়ে উঠতে পারেনি। আর তার জন্যই আগামীতেও লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিতই দিচ্ছেন তাঁরা…

আরও পড়ুন
ধর্ষণ শুধুই যৌনাঙ্গ-নির্ভর নয়; যৌনতার ভাষা শিখতে হবে প্রথমে : মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
শিশু-ধর্ষণের শাস্তি ক্যাস্ট্রেশন, নতুন আইন পাশ হল নাইজেরিয়ার রাজ্যে