শুধুই মার্ভেল-ডিসি নয়, পর্দা কাঁপিয়েছেন একডজন ভারতীয় সুপারহিরোও

/১৪

দেখতে গেলে, ভারতের থেকে সবদিক থেকে এগিয়ে থাকলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাগ্য খুব একটা সুপ্রসন্ন নয়। দু’দিন ছাড়াই সেখানে হানা দেয় ভিনগ্রহী জীব কিংবা সমান্তরাল বিশ্বের ভয়ঙ্কর সব দত্যি-দানো। নেহাত ব্যাটম্যান, সুপারম্যান, ক্যাপটেন আমেরিকা কিংবা স্পাইডার-ম্যানরা রয়েছে বলেই রক্ষা। আর ভারতে? ধারে, ভারে তা যুক্তরাষ্ট্রের থেকে কম হলেও এ-দেশে রয়েছে বেশ কিছু সুপারহিরো রয়েছে। এক ঝলক দেখে নেওয়া যাক তাদের।

/১৪

মিন্নাল মুরলী— ২০২১ সালেই মুক্তি পেয়েছিল ভারতীয় সুপারহিরো ফিল্ম মিন্নাল মুরলী। বাসিল জোসেফের তৈরি এই মালয়ালম চলচ্চিত্র ব্লকব্লাস্টার হয়েছিল দক্ষিণে। বলতে গেলে, মিন্নাল মুরলীই প্রথম ভারতীয় সুপারহিরো সিনেমা যা রীতিমতো টক্কর দিতে পারে হলিউডি চলচ্চিত্রের সঙ্গে। কুরুক্কানামকোলা গ্রামের সামান্য টেলর জেসনই এই ছবির মূল হিরো। অতিমানবিক শক্তির বহিপ্রকাশের পর জেসন হয়ে ওঠে গোটা গ্রামের রক্ষাকর্তা।

/১৪

মিস্টার ইন্ডিয়া— ১৯৮৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল হিন্দি ভাষার এই চলচ্চিত্রটি। মিস্টার ইন্ডিয়াকে ভারতের প্রথম সুপারহিরো ফিল্ম বললেও ভুল হয় না খুব একটা। অনীল কাপুর, শ্রীদেবী এবং অমরেশ পুরির ত্রয়ী রীতিমতো দাপটের সঙ্গেই রাজত্ব করেছিল বিনোদন জগতে। চলচ্চিত্রে অমরেশ পুরি অভিনীত ভিলেন মোগ্যাম্বোর ভারত-জয়ের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল মিস্টার ইন্ডিয়া। কিছুদিন আগেই পরিচালক আব্বাস জাফর জানিয়েছিলেন তৈরি হতে চলেছে মিস্টার ইন্ডিয়ার ট্রিলজি।

/১৪

তুফান— সুপারহিরো মানেই অতিপ্রাকৃতিক ক্ষমতা থাকতে হবে তেমনটা নয়। বরং, অপরাধের বিরুদ্ধে তার অবস্থানই, কোনো কোনো চরিত্রকে সুপারহিরো বা ভিজেল্যান্টি করে তোলে। খোদ স্ট্যান লির হাতেও জন্ম নিয়েছে এমন অনেক সুপারহিরো। সেদিক থেকে ১৯৮৯ সালের অমিতাভ বচ্চন অভিনীত তুফান সিনেমাটাও পড়ে সুপারহিরোর জঁরের মধ্যে। বাবার হত্যাকারী শয়তান সিং-কে শাস্তি দিতেই অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন অমিতাভ বচ্চন। যদিও সেলুলয়েড পর্দায় এমন এক অভিনেতা থাকার পরেও ফ্লপ হয়েছিল তুফান।

/১৪

শাহেনশাহ— তুফানের মতো শাহেনশাহ-রও নায়ক সেই অমিতাভ বচ্চনই। তাঁর অভিনীত অন্যতম অ্যাকশন সিনেমাও বলা যেতে পারে শাহেনশাহ-কে। ১৯৮৮ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিতে অমিতাভ বচ্চন এক বৈচিত্রময় চরিত্র। দিনের বেলায় তাঁকে দেখা যায় এক দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ অফিসারের ভূমিকায়। আবার রাতের বেলায় তিনি অপরাধীদের সাক্ষাৎ যম। তিন দশক পেরিয়ে এসেও বয়স বাড়েনি ‘নাম হে শাহেনশাহ’-র।

/১৪

কৃষ— মুখে কালো মাস্ক, অতিমানবিক শক্তি, জমকালো সুপারহিরো পোশাক— কোনো কিছুরই অভাব ছিল না কৃষ-এ। ২০০৬ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবি এমনকি ভিনগ্রহী প্রাণীদের ছোঁয়া লেগে আছে। আসলে এই চলচ্চিত্র যে ‘কোয়ি মিল গায়া’-র সিক্যুয়াল। আর কৃষের অতিমানবিক ক্ষমতার পিছনেও রয়েছে ভিনগ্রহী 'জাদু'-র হাত। তবে গল্পের বুনন কি সেইমতো দমদার ছিল? বোধ হয় না। আর সেই কারণেই রাকেশ ও ঋত্বিক রোশনের জুটি ডাহা ফেল করে বক্স অফিসে।

/১৪

রা ওয়ান— ভারতীয় সিনেজগতে সুপারহিরো ও সায়েন্স ফিকশন সিনেমাকে এই মাত্রায় নিয়ে যাওয়া যেতে পারে, তা রা ওয়ানের আগে কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পেরেছিল কী? অবশ্য এই গল্পের ভিলেন কিংবা নায়ক, কেউই মানুষ নন। আবার রোবট বললেও ভুল হবে তাদের। ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি ভিডিও গেম থেকেই বাস্তবের জগতে নেমে আসে শাহরুখ খান অভিনীত চরিত্র রা ওয়ান এবং তার ভিলেন জি ওয়ান। অভিনয় কিংবা অ্যাকশনে কমতি না থাকলেও, সুপারহিরোর জগতে সেইভাবে আঁচড় কাটতে পারেনি ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রটি।

/১৪

মুগামুডি— রা ওয়ানের ঠিক পরের বছরই মুক্তি পেয়েছিল মিসকিন পরিচালিত তামিল চলচ্চিত্র মুগামুডি। মুগামুডির ছবি দেখলে হঠাৎ করে ব্যাটম্যান হিসাবেই ঠাহর করবেন যে কেউ। মুখের মাস্ক থেকে শুরু করে, কাঁধ থেকে পিছনে ঝোলানো কালো চাদর কিংবা তার পোশাক— সবই ব্যাটম্যানের আদলে তৈরি। এমনকি তার আসল নামটাও ‘ব্রুস’। মার্শাল আর্টিস্ট ব্রুস পুলিশকে সাহায্য করত অপরাধীদের ধরে দেওয়ার জন্য। দক্ষিণে বেশ জনপ্রিয়ও হয়েছিল এই সুপারহিরো ফিল্ম।

/১৪

রোবট— ২০১১ সালে ‘থালাইভা’ রজনীকান্ত অভিনীত রোবট ভারতীয় চলচ্চিত্রের দুনিয়ায় অন্যতম বিগ বাজেট মুভিগুলির মধ্যে একটি। সিনেমায় দ্বৈত চরিত্রে দেখে গিয়েছিল রজনীকান্তকে। সিনেমায় তিনি খ্যাতনামা এক গবেষক। তাঁর তৈরি রোবটই হয়ে ওঠে সিনেমার মূল ভিলেন। আর ভিলেনের চরিত্রেও দেখা গিয়েছিল তাঁকেই। ২০১৮ সালে সিক্যুয়ালও প্রকাশিত হয় এই চলচ্চিত্রের। থালাইভার জনপ্রিয়তায় প্রেক্ষাগৃহ উপচে উঠেছিল ঠিকই, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই থিতিয়ে পড়ে সেই উন্মাদনা।

১০/১৪

কান্থাস্বামী— ২০০৯ সালে মুক্তি পেয়েছিল সুসি গণেশনের পরিচালিত এই ছবি। ছবির মূল চরিত্র মাল্লানা এক সিবিআই অফিসার। ভারতে ক্রমবর্ধমান দুর্নীতির সঙ্গেই তাঁর লড়াই ফুটে ওঠে সেলুলয়েড পর্দায়। তবে এর বাইরেও তাঁর অদ্ভুত এক সুপারপাওয়ার রয়েছে। তিনি চাইলেই যে কারোর ইচ্ছেপূরণ করতে পারেন স্রেফ চিন্তার জোরে। রাতেরবেলায় মাস্ক পরে তিনি নেমে আসেন দরিদ্রদের সাক্ষাৎ অবতার হয়ে।

১১/১৪

ভবেশ যোশী সুপারহিরো— ভারতীয় সুপারহিরো সিনেমার কথা হলে ২০১৮ সালের এই তামিল চলচ্চিত্রটির কথা বলতেই হয়। রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা ও ডার্ক থিমের ফিউশন এক অন্য মাত্রা দিয়েছিল ভবেশ যোশীকে। সিনেম্যাটোগ্রাফি, অ্যাকশন, স্ক্রিপটরাইটিং, সঙ্গীত— প্রতিটা ক্ষেত্রেই অনন্যতার ছাপ রেখেছিল এই চলচ্চিত্র। কিন্তু এত কিছুর পরেও মার্কেটিং এবং জনপ্রিয় অভিনেতার অভাবেই সিনেজগৎ থেকে হারিয়ে যায় ভবেশ যোশী।

১২/১৪

দ্য ফ্লাইং জাট— ২০১৬ সালে কোরিওগ্রাফার রেমো ডিসুজার পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘দ্য ফ্লাইং জাট’ চলচ্চিত্রটি। গল্পের মূল চরিত্র আমন বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয়ে অদ্ভুত সুপারপাওয়ারের অধিকারী হয়ে ওঠেন। মার্শাল আর্টের শিক্ষা ছিল আগে থেকেই। অতিমানবিক ক্ষমতা পাওয়ার পর তিনি হয়ে ওঠেন অপরাধীর শিকার হওয়া মানুষের রক্ষাকবজ। নিজের পোশাকি নাম রাখেন ফ্লাইং জাট। বক্স অফিসে ৫৬ কোটি টাকার ব্যবসা করলেও কালের আবহেই হারিয়ে যায় রেমো ডিসুজা পরিচালিত এই সুপারহিরো সিনেমা।

১৩/১৪

শক্তিমান— ভারতে সুপারহিরোর কথা উঠলে আবশ্যিকভাবেই প্রসঙ্গ আসতে বাধ্য শক্তিমানের। নব্বইয়ের দশকে টেলিভিশন মাতিয়ে রেখেছিল মুকেশ খান্না অভিনীত এই চরিত্রটি। ১৯৯৭ সালে ২০০৫ সাল পর্যন্ত টানা আট বছর চলেছিল এই ধারাবাহিক। শক্তিমানের গল্প নিয়ে নতুন করে বলার নেই কিছুই। কিন্তু হঠাৎ করে চলচ্চিত্রের তালিকায় শক্তিমান কেন? এখনও পর্যন্ত এই চরিত্রটিকে নিয়ে কোনো সিনেমা নেই ঠিকই, তবে বড়ো পর্দায় আসতে খুব বেশি দেরি নেই তার। গত বছরই মুকেশ খান্না জানিয়েছিলেন আসতে চলেছে শক্তিমান ট্রিলজি।

১৪/১৪

ভারতে সুপারহিরো সিনেমার ভক্তসংখ্যা নেহাত কম নয়। ভারতের বুকে দাঁড়িয়ে মার্ভেল, ডিসি বিপুল অঙ্কের ব্যবসা করে চলেছে। অথচ, ফ্লপ হচ্ছে স্বদেশি সুপারহিরোরাই। তার কারণ হয়তো গল্পের বাঁধন কিংবা দোর্দণ্ডপ্রতাপ ভিলেনের অভাব। স্পাইডার-ম্যান ছবির একটি বিখ্যাত ডায়লগ ছিল আঙ্কেল বেনের কণ্ঠে। ‘গ্রেট পাওয়ার কামস উইথ গ্রেট রেসপন্সিবিলিটিস’। ভারতীয় সুপারহিরোদের সেই দায়িত্ব নেওয়ার সুযোগটাই হয়তো করে দিতে পারছি না আমরা। তবে ক্রমশ বিবর্তিত হচ্ছে ভারতের সিনেজগৎ, বিবর্তিত হচ্ছে সুপারহিরোরাও। আশা করা যায়, খরা কাটিয়ে আগামীদিনে ক্যাপ্টেন আমেরিকা বা ব্যাটম্যানদেরও টেক্কা দিতে পারবে ভারতীয় সুপারহিরোরা…

Powered by Froala Editor

More From Author See More