অসুস্থ বাবাকে নিয়ে ১২০০ কিলোমিটার পাড়ি সাইকেলে, জাতীয় ফেডারেশন থেকে ডাক

বিহারের একটি প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা মোহন পাসোয়ান। যদিও কর্মসূত্রে তিনি থাকেন গুরগাঁওতে। লকডাউনে আটকে পড়া কর্মহীন এবং সহায় সম্বলহীন পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে ছিলেন তিনিও। এদিকে সরকারের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও ঘরে ফেরার কোনো সুযোগ পাচ্ছিলেন না তিনি। তাঁর পরিচিত কেউ কেউ পায়ে হেঁটে রওয়ানা হলেও তাঁর পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। কারণ একদিকে তাঁর বাড়ির দূরত্ব ১২০০ কিলোমিটার, আর অন্যদিকে তাঁর শরীরও অসুস্থ। এমন পরিস্থিতিতে বাবার হাত ধরতে এগিয়ে এল মেয়ে জ্যোতি কুমারী।

১৫ বছরের জ্যোতি তার বাবাকে সাইকেলের পিছনে বসিয়ে পাড়ি দিল ১২০০ কিলোমিটার পথ। যে যাত্রা অনেক কৃতি সাইক্লিস্টের কাছেও অসম্ভব মনে হতে পারে, সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করলো এই ছোটো মেয়েটি। তার এই যাত্রার কথা শুনে সম্প্রতি ডাক এসেছে ভারতের সাইক্লিং ফেডারেশন থেকেও। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে ট্রায়ালের জন্য দেখা করতে বলেছেন ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ওঙ্কার সিং। অবশ্য জ্যোতি জানিয়েছে সে এখন ক্লান্ত। একমাস বিশ্রাম নিয়ে তারপর সে দেখা করবে।

গুরগাঁও শহরে মোহন পাসোয়ান একটি অটো-রিক্সা চালাতেন। কিন্তু হঠাৎ একটি দুর্ঘটনার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর সেবার জন্য গুরগাঁও গিয়েছিল জ্যোতি। আর এর মধ্যেই এসে পড়ে লকডাউন। ভাড়ার রিক্সা ফিরিয়ে দিতে হয় মালিককে। রোজগারের কোনো সুযোগ নেই। আবার খাবার, অর্থ কোনোকিছুরই সঞ্চয় নেই। এমন পরিস্থিতিতে ভাগ্যের সঙ্গে লড়াই করার শক্তিটুকুও যে ছিল না। এই কঠিন সময় থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় গ্রামে ফিরে যাওয়া। জ্যোতি তাই সমস্ত সঞ্চিত টাকা দিয়ে একটি পুরনো সাইকেল কিন ফেলে। তারপর বাবাকে সাইকেলের পিছনে বসিয়ে যাত্রা শুরু করে গ্রামের উদ্দেশ্যে। সেদিন ছিল ১০ মে। ১২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বিহারে নিজের গ্রামে পৌঁছতে তার সময় লাগে ঠিক ৭ দিন। ১৬ মে পৌঁছে যায় তারা।

এই ঘটনার পরেই জ্যোতির কথা ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। তার সাইকেল চালানোর ভিডিও সকলের নজর কাড়ে। এমনকি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্পও জ্যোতির এই পরিশ্রমের প্রশংসা করেন। কিন্তু পরিশ্রমের থেকেও যেন বড় এক বিস্ময়। যে কাজ কৃতি সাইক্লিস্টদের পক্ষেও অসম্ভব, তা সম্ভব করলো একটি ১৫ বছরের মেয়ে! মাত্র ৭ দিনে ১২০০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে পারে, এমন সাইক্লিস্ট ভারতে বিরল। তাই স্বাভাবিকভাবেই জ্যোতির ঘটনা নজরে পড়ে ভারতের সাইক্লিং ফেডারেশনের।

ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ওঙ্কার সিং জানিয়েছেন, দিল্লির আইজিআই স্টেডিয়ামে তার ট্রায়ালের ব্যবস্থা করা হবে। প্রথম ট্রায়ালে উত্তীর্ণ হলেই তাকে ভর্তি করা হবে স্টেট-অফ-দ্য-আর্ট ন্যাশনাল সাইক্লিং অ্যাকাডেমিতে। আর তারপরে দেশের ক্রীড়া জগতের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রে পরিণত হওয়া তার জন্য কেবল সময়ের অপেক্ষা। লকডাউনের এই কঠিন সময় এভাবেই বদলে দিল জ্যোতির জীবন। আর নেটিজেনদের 'বিস্ময় কন্যার' এই স্বীকৃতিতে সামাজিক মাধ্যমেও উঠেছে প্রশংসার ঝড়। আসলে জীবনে বেঁচে থাকার থেকে বড় লড়াই তো কিছুই হয় না। সেই লড়াই যে সফলভাবে লড়তে পারে, সেই প্রকৃত বিজয়ী।

More From Author See More