রহস্যময় কণার বিশ্লেষণে চাঞ্চল্যকর তথ্য! বদলাতে পারে পদার্থবিদ্যার ধারণা

অভিকর্ষ, তড়িৎ-চুম্বকীয় বল, সবল নিউক্লিয় বল এবং দুর্বল নিউক্লিয় বল— মূলত এই চার ধরণের বলের অস্তিত্ব রয়েছে ব্রহ্মাণ্ডে। অন্তত এখনও পর্যন্ত পদার্থবিদ্যার সমস্ত সূত্রই দাঁড়িয়ে রয়েছে এই তত্ত্বের ওপরেই। তবে এই চারের বলের বাইরেও এবার পঞ্চম বলের অস্তিত্বের আভাস দিল সাম্প্রতিক আবিষ্কার। শিকাগোর ফার্মিল্যাব কোলাইডার ডিটেক্টর (FCD) যন্ত্রে সম্প্রতি ধরা দিল রহস্যময় উপ-পারমাণবিক কণা (Subatomic Particle)। তার চরিত্রের বিশ্লেষণই ইঙ্গিত দিচ্ছে পঞ্চম বলের অস্তিত্বের কথা। 

ইলিনয়ের পরীক্ষাগারের কণাত্বরকে ধরা পড়া সাব-অ্যাটোমিক পার্টিকল বা উপ-পারমাণবিক কণাটি আদতে একটি বিশেষ ধরনের বোসন কণা। যা পরিচিত ‘ডব্লু বোসন’ (w Boson) নামে। না, এই কণা নতুন নয়। বহু আগে থেকেই পদার্থবিদদের কাছে অতি-পরিচিত এই কণার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় ডব্লু-বোসনের ভর নির্ণয়ের চেষ্টা করেছিলেন গবেষকরা। আর সেই পরীক্ষার ফলাফলই রীতিমতো চমকে দেয় বিজ্ঞানীদের। 

গাণিতিকভাবে ডব্লু বোসন কণার যা ভর হওয়া উচিত, পরীক্ষালব্ধ ফলাফল অনুযায়ী তার ভর প্রায় দ্বিগুণ। প্রাথমিকভাবে যান্ত্রিক বা প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণেই এমন ফলাফল এসেছে বলে মনে করেছিলেন গবেষকরা। তবে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রথম সারির গবেষকরা সংশ্লিষ্ট ফলাফল ও বিশ্লেষণ দেখে নিশ্চিত করেছেন, প্রথমবারের জন্য ০.০১ শতাংশ নির্ভুলতার সঙ্গে পরিমাপ করা হয়েছে ডব্লু বোসনের ভর। কিন্তু তা সত্ত্বেও গাণিতিক স্ট্যান্ডার্ড মডেলের সঙ্গে এই বৈসাদৃশ্যের কারণ কী?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে ফিরে যেতে হবে মৌলিক বলের ধারণায়। প্রোটন, নিউট্রন থেকে শুরু করে যেকোনো উপ-পারমাণবিক কণার ভরই নির্ভর করে মূলত চারটি মৌলিক বলের ওপর। শুরুতেই কথা হচ্ছিল যে বিষয়ে। এই চারটি বলের প্রভাব বিবেচনা করেই এতদিন গাণিতিক পদ্ধতিতে নির্ণয় করা হয়েছিল ডব্লু বোসনের ভর। পরীক্ষালব্ধ ফলাফলের সঙ্গে এই গাণিতিক সমাধানের বৈসাদৃশ্যই যেন প্রমাণ করছে মহাবিশ্বে এই চার বলের বাইরেও অস্তিত্ব রয়েছে অজানা কোনো বলের। সম্প্রতি এই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বের প্রথম সারির বিজ্ঞান পত্র ‘সায়েন্স’ জার্নালে।

আরও পড়ুন
পরিবেশ ও বিদ্যুৎ বাঁচাতে সৌরশক্তি-চালিত এসি, পথ দেখাচ্ছেন দিল্লির বিজ্ঞানী

এর আগে পঞ্চম বলের অস্তিত্বের সম্পর্কে ধারণা দিয়েছিলেন বহু বিজ্ঞানীই। ব্রহ্মাণ্ডে উপস্থিত ডার্ক ম্যাটার এই বিশেষ বলের ক্রিয়াতেই তৈরি বলে দাবি করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু তার স্পষ্ট কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি এতদিন। ডব্লু বোসনের ভর রহস্যই যেন সেই সমাধান না হওয়া পাজলের হারানো অংশ। খ্যাতনামা জ্যোতির্বিদ কার্ল সেগানের অভিমত তেমনই। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্বের পর এটিই পদার্থবিদ্যার জগতে যুগান্তকারী আবিষ্কার বলে মনে করছেন তিনি। ডব্লু বোসন রহস্যের স্থায়ী সমাধান হলে পদার্থবিদ্যার চিরাচরিত সূত্র এবং ধারণাও সম্পূর্ণভাবে বদলে যাবে আগামীদিনে। এখন তা শুধু সময়ের অপেক্ষা…

আরও পড়ুন
পৃথিবীর বুকে গভীরতম গর্ত খুঁড়তে চলেছেন বিজ্ঞানীরা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
আধুনিক মানুষের ১০ হাজার বছরের বংশতালিকা তৈরি করলেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা