রাস্তার ধারের লাইব্রেরিই হয়ে উঠছে প্যান্ট্রি, মানবিকতার বিরল ছবি আমেরিকায়

রাস্তার ধারে ছোট্ট ক্যাবিনেট। এতদিন সেখানে শুধু বই থাকত। মানুষ নিজের ইচ্ছে মতো বই রেখে যেত বা নিয়ে যেত। এগুলোর একটা ডাকনাম আছে। 'লিটল ফ্রি লাইব্রেরি'। কিন্তু কিছুদিন হল দেখা যাচ্ছে, শুধু বই নয়। বইয়ের সঙ্গে থাকছে নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রী। যেমন টয়লেট পেপার, পেপার টাওয়াল, শুকনো খাবার বা ফলমূল। প্রথম প্রথম অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। তারপর নিজেরাও সেই উদ্যোগে জড়িয়ে পড়লেন। এভাবেই মিনেসোটার রাস্তায় তৈরি হল 'লিটল ফ্রি প্যান্ট্রি'।

আরও পড়ুন
গৃহবন্দিরা ‘একা’ নন, সাহায্যের জন্য ২৫০টি স্বেচ্ছাসেবী দল ইংল্যান্ডে

এমন উদ্যোগ অবশ্য এই প্রথম নয়। ২০১৬ সালে আমেরিকার আরকানসাস অঞ্চলে রীতিমতো একটা আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন জেসিকা ম্যাক-ক্লার্ড। সেদেশে প্রায়ই খাদ্যসংকট ঘটে। বেশিরভাগ মানুষ দিন কাটায় অনাহারে, অর্ধাহারে। জেসিকা উদ্যোগ নিয়েছিলেন যাতে এলাকার সবাই নিজেদের মধ্যে খাবার ভাগ করে নিতে পারে। যাদের বাড়িতে যথেষ্ট সঞ্চয় আছে, তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো খাবার রেখে আসবে রাস্তার ধারে ক্যাবিনেটে, আর যাদের সেটা প্রয়োজন তারা সংগ্রহ করে নেবে।

আরও পড়ুন
পিতৃস্মৃতিতে তৈরি লাইব্রেরি, সঙ্গে বয়স্কদের জন্য উদ্যানও – ব্যাতিক্রমী উদ্যোগ সোনারপুরের ব্যক্তির

সেখান থেকেই ভাবনাটা পেয়েছেন শেলি অ্যান্ডারসন। আর এখন এমন একটা সময়, যখন করোনার আতঙ্কে দেশজুড়ে প্রায় জরুরি অবস্থা। বন্ধ দোকানপাট। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারছেন না অনেকেই। কেউ কেউ অবশ্য আগে থেকেই জিনিস কিনে মজুত করে রেখেছেন। তবে অনেকেরই তেমন সামর্থ্য নেই। তাই এই পরিস্থিতিতে 'ফ্রি প্যান্ট্রি' যে বেশ ইতিবাচক একটা উদ্যোগ হবে, সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

আরও পড়ুন
নিয়মিত খাওয়াতেন কাকের ছানাদের, পাঁচ বছর পর আশ্চর্য উপহার দিল তারাই

যেমন ভাবনা, তেমনই কাজে লেগে গেলেন। নিজের সন্তানদের বুনিয়াদি স্কুলে অনুমতি চাইলেন, তাদের ফ্রি লাইব্রেরিকে ফ্রি প্যান্ট্রি বানিয়ে তুলতে। অনুমতিও পেয়ে গেলেন খুব তাড়াতাড়ি। আর তারপরেই কিছু শুকনো খাবার আর টয়লেট পেপার রেখে এলেন সেখানে। কাজও হল শেলির পরিকল্পনায়। মানুষ শুধু নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহই করছে না, নিজেদের সাধ্যমতো জিনিস রেখেও আসছে।

আরও পড়ুন
পুনর্জন্ম পেলেন এই মহিলা, মানবিকতার আরেক মুখ ধুবুলিয়ার মিঠুন

শেলির এই উদ্যোগ ইতিমধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। আশেপাশের অনেক ফ্রি লাইব্রেরিই রূপ বদলে ফ্রি প্যান্ট্রি হয়ে উঠছে। আর সারা পৃথিবীতে স্বীকৃত ফ্রি লাইব্রেরির সংখ্যাও ৭৫০০০-এর কম নয়। এমন ধরণের উদ্যোগ সমাজের প্রতিটা মানুষকে একটা মানবিকতার সুতোয় জড়িয়েও রাখছে, আবার কেউ কাউকে স্পর্শ করছে না। অতএব ভাইরাসের সংক্রমণেরও সম্ভবনা নেই। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইতে এমন মানবিক উদ্যোগগুলোই যেন পথ দেখাচ্ছে বারবার।