অসচেতনতার কাছে হার মানল আইন, রাজ্যজুড়ে দৌরাত্ম্য বাজির

করোনা আবহেই দীপাবলি। কাজেই সামান্যতম দূষণ ডেকে আনতে পারে ভয়াবহতা। আর সেই আশঙ্কাতেই আগে থেকে বাজির কেনা-বেচা নিষিদ্ধ করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। পথে নেমেছিলেন বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও। কিন্তু তারপরেও কাজ হল না তেমন। আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই চলল বাজির-পটকা ফাটানো।

গতকাল দীপাবলির রাতে খোদ কলকাতাতেও ফাটল পটকা-শব্দবাজি-আতশবাজি। তবে সকাল থেকেই পুলিশের তৎপরতায় খানিকটা হলেও কমেছে বাজির ব্যবহার। তবে শহরের গণ্ডি পেরোতেই বারুদের দাপট। শহরতলি ও প্রান্তিক অঞ্চলগুলিতে অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন নেই বললেই চলে।

কালীপুজোর সকাল থেকেই পুলিশের চোখে ধুলো দিয়েই চলছিল বাজির বিক্রি। জেলায় জেলায় বহু দোকান থেকে বাজি বাজেয়াপ্তও করে পুলিশ। তবে তার পরিমাণ সামগ্রিকভাবে নগণ্য। 

আতশবাজির ব্যবহার বন্ধের জন্য গত কয়েকদিন ধরেই প্রচার চালিয়ে গেছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মাধবপুর পরিবেশ চেতনা সমিতি। এই উদ্যোগে পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল আরও কয়েকটি সংস্থা। সম্মিলিতভাবে চালু করা হয়েছিল বেশ কয়েকটি হেল্প লাইন নম্বরও। সন্ধে থেকে সারা রাত টহল দিলেন স্বেচ্ছেসেবকরা। তবে সামগ্রিকভাবেই তাঁদের মধ্যে ফুটে উঠছে হতাশার ছবি। 

মাদবপুর পরিবেশ চেতনা সমিতির সম্পাদিকা জয়িতা কুণ্ডু জানালেন, “আইন করে, বিভিন্ন ক্যাম্পেন করেও সচেতন করা গেল না মানুষকে। সেইভাবে কড়াকড়ি ব্যবস্থাও নেয়নি প্রশাসন। বাজি বিক্রি হচ্ছে দেখে পুলিশকে ইনফর্ম করায় কয়েক বস্তা বাজি তুলে নিয়ে যায় স্থানীয় প্রশাসন। তবে বাড়তি কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তারপর আবার যেমন বিক্রি হচ্ছিল, তেমনই। বাজি ফাটছে সামনে থেকে দেখেও, সিভিল পুলিশরা একেবারেই নিষ্ক্রিয় ছিল।”

কিন্তু কতটা ছিল এই বছর বাজি পোড়ানোর মাত্রা? রাস্তায় টহল দিতে দিতেই পরিস্থিতি জানালেন জয়িতা কুণ্ডু, “গত বছরের তুলনায় এবছর আরও ছাপিয়ে গেছে বাজির পরিমাণ। আতশবাজি তো বটেই শব্দবাজিও বেড়েছে। বিশেষ করে আবাসনগুলিতে। একটু রাতের দিকে রাস্তা ফাঁকা হয়ে যেতে, সেখানেও বাজির দৌরাত্ম ছিল। দূষণ বৃদ্ধি পাওয়ার যে ভয়টা আমরা পাচ্ছিলাম সেটাই সত্যি হতে চলেছে।”

আরও পড়ুন
বাজির ব্যবহার রুখতে পথে পরিবেশকর্মীরা, অভিযোগের জন্য চালু হেল্পলাইনও

তবে গতকালের থেকে আজ, আগামীকাল আরও বাড়বে দূষণের মাত্রা, সেই আশঙ্কাই করছেন পরিবেশকর্মীরা। রাজ্যের উচ্চ আদালত রায় দেওয়ার পরেও এই অবস্থায় স্তম্ভিত তাঁরা সকলেই। দীপাবলির রাতেই স্পষ্ট হয়ে গেল বিন্দুমাত্র সচেতন নয় নাগরিকরা। সচেতন হতে পারেনি রাজ্যের সামগ্রিক প্রশাসনও। ফলে কার্যত খাতায় কলমেই থেকে গেল আইন...

Powered by Froala Editor