একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের নিষেধে কতটা বদলাবে পরিবেশ?

গত বছরের আগস্ট মাসের কথা। প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সংশোধিত বিধিমালা প্রকাশ করেছিল কেন্দ্র। সেখানেই জানানো হয়েছিল এক বছরের মধ্যে দেশজুড়ে বন্ধ করা হবে একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক। পরবর্তীতে জানানো হয়েছিল এই নতুন নিয়মের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে ২০২২ সালের পয়লা জুলাই থেকে। হ্যাঁ, গতকালই থাকেই জারি হল এই বিশেষ আইন। কিন্তু সরকার এই পদক্ষেপে পরিবেশের হালই বা ফিরবে কতটা?

সরকারের নির্দেশিকা অনুযায়ী, নিষিদ্ধ (Plastic Ban) করা হয়েছে মূলত ১৯টি প্লাস্টিকজাত পণ্য। এর মধ্যে রয়েছে এয়ারবাড, স্ট্র, প্লাস্টিকের কাপ-প্লেট-চামচ-গ্লাস-ছুরি, ট্রে, মিষ্টির বাক্স বাঁধার রিবন, থার্মোকল, স্টিয়ারার, সিগারেটের প্যাকেট, আইসক্রিম ও ক্যান্ডি স্টিক। মূলত, ১০০ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিকের উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধ করার ওপরেই বিশেষভাবে জোর দিয়েছে কেন্দ্র। 

যেকোনো প্লাস্টিকই বায়োডিগ্রেডেবল নয়। তবে কোনো প্লাস্টিক ১০০ মাইক্রনের থেকে পাতলা হলে, তার চরিত্র বেশি ভঙ্গুর হয়। অর্থাৎ, অল্পসময়ের মধ্যেই ছোটো ছোটো টুকরোতে ভেঙে যায় এই ধরনের প্লাস্টিক। যা আমাদের কাছে পরিচিত মাইক্রোপ্লাস্টিক নামে। সাধারণ প্লাস্টিক পণ্যের থেকেও আণুবীক্ষণিক এই প্লাস্টিক কণা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। এই সংক্রান্ত একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্যও উঠে এসেছে সাম্প্রতিক গবেষণায়। পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট থেকে শুরু করে গভীরতম স্থান মারিয়ানা ট্রেঞ্চ— সর্বত্রই হদিশ মিলেছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের। বাস্ততন্ত্রের ক্ষতিসাধন তো বটেই, খাদ্য এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে মানুষের দেহেও অবাধে প্রবেশ করছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। কেন্দ্রের প্লাস্টিক নিষিদ্ধকরণের সিদ্ধান্তে এবার রেশ পড়তে চলেছে এই মাইক্রোপ্লাস্টিক উৎপাদনে।

পাশাপাশি আগামী ডিসেম্বর মাস থেকে পৃথকভাবে নিষিদ্ধ হবে ১২০ মাইক্রন পুরু প্লাস্টিকও। ১২০ মাইক্রনের থেকে বেশি পুরু প্লাস্টিকের ঘনত্ব ও ওজন বেশি হওয়ায়, তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে না হাওয়ার মাধ্যমে। পাশাপাশি পরিবেশ থেকে তাদের পৃথকীকরণের কাজও অনেকটাই সহজ। ফলে, সার্বিকভাবে প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে আসবে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। 

আরও পড়ুন
নদী থেকে বর্জ্য প্লাস্টিক গিলে খাচ্ছে ড্রোন! নজির গড়ল ডাচ প্রযুক্তি

তবে শুধু পরিবেশই না, সরকারের এই পদক্ষেপ হাল ফেরাবে অর্থনীতিরও। একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ হওয়ায় চাহিদা বাড়বে বিকল্প ব্যাগের। মূলত কাপড় ও চটের তৈরি ব্যাগের। ফলে, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পও মাথা তুলে দাঁড়াবে বলেই আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা। 

আরও পড়ুন
পরিত্যক্ত প্লাস্টিক দিয়ে চিত্রকর্ম! পথ দেখাচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকার শিল্পী

ভারতের আগে এই একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল ইউরোপের একাধিক উন্নত দেশ। হাতেনাতেই পাওয়া গেছে তার সুফল। এবার দেখার, ভারতের পরিস্থিতি কত দ্রুত বদলে ফেলতে পারে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত…

আরও পড়ুন
পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিক বোতল ডেকে আনছে বিপদ! জানাচ্ছে সাম্প্রতিক গবেষণা

Powered by Froala Editor