১৫ মার্চ, ১৯৭৫। মালয়েশিয়ার মারদেকা স্টেডিয়ামে তখন মুখোমুখি হকি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নশিপের দাবিদার দুই দল। একদিকে ১৯৭১-এর বিশ্বকাপজয়ী পাকিস্তান আর অন্যদিকে অলিম্পিকে বরাবরের অপ্রতিরোধ্য ভারতের পুরুষ হকি দল। সেবারে ভারত বিজয়ীর সম্মান অর্জন করেছিল। সেই প্রথম এবং শেষবার হকি বিশ্বকাপে বিজয়ীর স্থান পায় ভারত। কিন্তু সেই দলের প্রশিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন যে মানুষটি, তার কথা দেশের মানুষ কতটা মনে রেখেছে, সে-বিষয়ে সন্দেহ আছে। বরাবর যেমন নিভৃতে থেকেছেন, তেমনই নীরবে বিদায় নিলেন বলবীর সিং সিনিয়র। আজ সকালে চণ্ডীগড়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ভারতের হকি ইতিহাসের এই কিংবদন্তি।
শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাজনিত কারণে গত ৮ মে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বলবীর সিং সিনিয়র। সঙ্গে সঙ্গে ভেন্টিলেটরে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। ১৭ দিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পরেও তাঁর প্রাণ রক্ষা করতে পারলেন না চিকিৎসকরা। এই কয়েকদিনের মধ্যে ২৩ বার তাঁর হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে পড়েছিল। অবশেষে সোমবার সেই কারনেই মৃত্যু হল তাঁর। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। যদিও তাঁর শরীরে করোনা সংক্রমণের কোনো নমুনা পাওয়া যায়নি।
দেশের হকিদলের জন্য একবারের বিশ্বকাপ নিশ্চিত করাই নয়, তাঁর অবদান আসলে হিসাবের বাইরে। ১৯৫৬ সালে ভারতের অলিম্পিক দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এছাড়াও ১৯৪৬ ও ১৯৪৮ সালেও ভারতীয় দলের হয়ে অলিম্পিকে সোনা জিতেছেন। ১৯৫৭ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনিই প্রথম পদ্ম পুরস্কারপ্রাপ্ত হকি খেলোয়াড়। তিনি বিশ্বের ইতিহাসে ফাইনাল ম্যাচে সবচেয়ে বেশি গোল করা হকি খেলোয়াড়। তাঁর আত্মজীবনী 'দ্য গোল্ডেন হ্যাট ট্রিক: মাই হকি ডেজ' আজও সেইসব অনন্য কৃতিত্বের সাক্ষী। শুধু মানুষটা আর নেই। অবশ্য দেশবাসী তাঁকে কতদিন মনে রাখবে, তাও জানা নেই।
Powered by Froala Editor