কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়ি সংরক্ষণে উদ্যোগী হেরিটেজ কমিশন

তিনি ভারতবর্ষের প্রথম মহিলা ডাক্তারদের অন্যতম। বহু অপমান লাঞ্ছনা সহ্য করেও বাংলার নারীদের মাথা তুলে দাঁড়াতে শিখিয়েছিলেন ডাঃ কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় (Dr. Kadambini Ganguly)। কিন্তু আমরা তাঁকে কতটুকুই বা সম্মান দিতে পেরেছি? এমনকি তিনি যে বাড়িটিতে থাকতেন, সেটিও ভেঙে পড়তে চলেছে বলে আশঙ্কা করছেন কাদম্বিনী ও দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের দৌহিত্র রাজীব গঙ্গোপাধ্যায়। বিষয়টি নিয়ে কিছুদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন তিনি। আর সেই চিঠির সূত্র ধরে এবার বাড়িটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে চলেছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন।

সাবেক ১৩, কর্নওয়ালিস স্ট্রিট; বর্তমানে ১৩ বি, বিধান সরণি। বাড়ির সামনে এখনও রয়েছে পুরনো একটি বোর্ড। তাতে লেখা, সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ। এই বাড়িতেই বিবাহের পর উঠেছিলেন দ্বারকানাথ এবং কাদম্বিনী। তবে বাড়ির ইতিহাস সেখানেই শেষ হয়ে যায় না। বাংলার নবজাগরণের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের এই বাড়িটি। তৎকালিন লাহা পরিবারের মালিকানাধীন এই বাড়িতে ১৮৬১ সালে তৈরি হয়েছিল কলকাতা ট্রেনিং অ্যাকাডেমি। ১৮৯০ সালে ট্রেনিং অ্যাকাডেমি অন্যত্র চলে গেলে এখানেই গড়ে ওঠে ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয়। পরে সেটাও মির্জাপুর স্ট্রিটে চলে যায়। কিন্তু ব্রাহ্ম সমাজের সঙ্গে লাহাপরিবারের বাড়িটির যোগসূত্র থেকেই যায়। তখন থেকেই ব্রাহ্মসমাজের অনেক সদস্যই বাড়িটি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন। দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ও ছিলেন তাঁদের একজন।

কিছু বছরের মধ্যেই দ্বারকানাথের প্রথম স্ত্রীর মেয়ে বিধুমুখীর সঙ্গে বিবাহ হয় উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর। উপেন্দ্রকিশোরও ছিলেন সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের সদস্য। বিবাহের পর তিনিও এই বাড়িতে এসে উঠেছিলেন। উপেন্দ্রকিশোরের ৫ সন্তানেরই জন্ম এই বাড়িতে। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন সুকুমার রায়ও। সব মিলিয়ে বাংলার ইতিহাসে বারবার ঘুরেফিরে আসে বিধান সরণির এই বাড়ির কথা। কিন্তু বর্তমান মালিকরা সেসবের খোঁজ রাখেন না। গোটা বাড়ির শরীরে বয়সের ছাপ স্পষ্ট। জায়গায় জায়গায় ইঁট সরিয়ে আগাছার দল মাথা তুলেছে। এমনকি বাড়িটি বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে বলেও আশঙ্কা করছেন রাজীব গঙ্গোপাধ্যায়।

হেরিটেজ কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে বাড়ির বর্তমান মালিক জনৈক গোবিন্দ গুপ্ত। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। এবং তিনি যাতে কোনোভাবেই এই বাড়ি ব্যবসায়িক কারণে বিক্রি না করেন, সেই বিষয়েও নির্দেশ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কমিশনের চেয়ারপার্সন চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন। মঙ্গলবার তিনি কমিশনের ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে বাড়ি পরিদর্শনেও যাবেন। সেখানে বাড়িটি সংরক্ষণের বিষয়ে যাবতীয় আলোচনাও হবে। ভারতের প্রথম মহিলা ডাক্তার কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িকে এভাবে নষ্ট হতে দেবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন তিনি।

Powered by Froala Editor

More From Author See More