‘ঘোস্ট গিয়ার’ শিকার করতে সমুদ্রগর্ভে হংকং-এর স্কুবা ডাইভার!

সাম্প্রতিক সময়ে সামুদ্রিক বাস্ততন্ত্রের যম হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘোস্ট গিয়ার। হ্যাঁ, এই নামের মধ্যে যেমন ভৌতিকতা লুকিয়ে রয়েছে, তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও তেমনই। পরিত্যক্ত মাছ ধরার জাল, দড়ি, ধাতব তার কিংবা প্লাস্টিকের তৈরি সরঞ্জাম— এসব কিছুই পড়ে ঘোস্ট গিয়ারের আওতায়। আর এই বর্জ্যই প্রতিবছর অপমৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায় কয়েক লক্ষ সামুদ্রিক প্রাণীর। কিন্তু এই দূষণ নিয়ন্ত্রণে নিরুত্তাপ সরকার। তাই সামুদ্রিক প্রাণীদের প্রাণ বাঁচাতে এবার লড়াইয়ের ময়দানে নামলেন হংকং-এর স্কুবা ডাইভার (Scuba Diver)।

হ্যারি চ্যান (Harry Chan)। হংকং-এর এই ৬৮ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত স্কুবা ডাইভারের স্ব-ঘোষিত পরিচয় এখন ‘ঘোস্ট নেট হান্টার’। হংকং এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের উপকূলরেখার নিকটবর্তী সমুদ্র থেকে পরিত্যক্ত আবর্জনা সরিয়ে ফেলতে প্রতিদিনই ডাইভারের স্যুটে অভিযানে নামেন হংকং-এর এই বৃদ্ধ। বিশ্বাস, পরিবেশের যত্ন না নেওয়া নিজেদের ওপরেই অভিশাপ ডেকে আনা। 

রাষ্ট্রপুঞ্জের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও-র রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে সমুদ্রে মেশে প্রায় ৬ লক্ষ ৪০ হাজার মেট্রিক টন ঘোস্ট গিয়ার। যা ৫০ হাজারেরও বেশি বাসের ওজনের সমান। ২০১৮ সালে প্রকাশিত গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচের সমীক্ষায় উঠে আসছে কেবল প্রশান্ত মহাসাগরে ঘোস্ট গিয়ার ছড়িয়ে রয়েছে ১৬ লক্ষ বর্গকিলোমিটার অঞ্চলকজুড়ে। 

সেদিক থেকে দেখতে গেলে হ্যারি চ্যানের এই লড়াই বা প্রচেষ্টা সামান্যই। কিন্তু তা বলে তো আর চুপ করে হাত গুটিয়ে বসে থাকা যায় না। দীর্ঘদিন স্কুবা ডাইভিং-এর জন্য হংকং সংলগ্ন সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যের হিসেব এবং ঘোস্ট গিয়ারের ভয়াবহতাও তাঁর মুখস্থ। হ্যারির অনুমান, সব মিলিয়ে এক লক্ষাধিক ডলফিন, সিল, কচ্ছপ এবং তিমির বসবাস হংকং-এর সমুদ্রে। পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য মাছ। এক দশকের মধ্যে ঘোস্ট গিয়ারের কারণে প্রায় ৩০ শতাংশ কমে আসতে পারে প্রাণীদের সংখ্যা। ফলে, প্রাণী সংরক্ষণের জন্য সমুদ্র থেকে ঘোস্ট গিয়ার অপসারণই এখন একমাত্র হাতিয়ার। 

আরও পড়ুন
জ্বলন্ত মশাল দিয়ে মাছ শিকার! মৃত্যুর পথে তাইওয়ানের প্রাচীন প্রথা

তবে আজ থেকে নয়, ১৯৮৭ সাল থেকেই এই লড়াইয়ে নেমেছেন হ্যারি। চালিয়েছেন ৩ হাজার বারেরও বেশি অভিযান। তাঁর কথায়, কখনও কখনও এক একটি জাল সরাতেই সময় লেগে যায় ৩ থেকে ৮ ঘণ্টা। তবে শুধুমাত্র কঠিন বা সময়সাপেক্ষ নয়, একইসঙ্গে এই কাজ বিপজ্জনকও বটে। এমনকি ঘোস্ট গিয়ার অপসারণ করতে গিয়ে নিজেও মৃত্যুর সম্মুখীন হতে হয়েছিল হ্যারিকে। অন্য ডাইভাররা সে-সময় উদ্ধার করেন তাঁকে।

আরও পড়ুন
সামুদ্রিক প্রাণীদের মৃত্যু থেকে আবহাওয়া পরিবর্তনে দায়ী গোস্ট গিয়ার, আশঙ্কায় বিশেষজ্ঞরা

তিন দশক আগে যে লড়াইটা তিনি একা শুরু করেছিলেন, সেখানে আজ আর একা নন হ্যারি। বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন ছোট্ট একটি স্কুবা ডাইভিং-এর দল। হ্যারির পাশাপাশি তাঁরাও এখন নিয়মিত সমুদ্রে নামেন পরিবেশ সংস্করণের কাজে। কিন্তু এভাবে কতদিন আর ঠেকিয়ে রাখা যেতে পারে দূষণের ভয়াবহতা? সরকারের তরফে বৃহত্তর কোনো কর্মসূচি নেওয়া হয় না বলেই অভিযোগ হ্যারির। আর সেটা না হলে, আদৌ কি বদলাবে সামগ্রিক পরিস্থিতির চিত্র? জানা নেই উত্তর…

Powered by Froala Editor