দু-দশকের কেরিয়ারে ইতি আজ, রূপকথার অপর নাম ঝুলন গোস্বামী

/১২

তখন উনিশ বছর বয়স তাঁর। প্রথমবার ভারতীয় জার্সি গায়ে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। লক্ষ্য ছিল, ফাস্ট বোলিং-এ বিশ্বজয়। কিন্তু কঠিন এই পিচে যে এতদিন টিকে থাকা যায়, তা নিজেও কি জানতেন তিনি? ঝুলন গোস্বামী। শচিন, সৌরভ, দ্রাবিড়ের মতোস তাঁকে ছাড়া অসম্পূর্ণ থেকে যায় ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাস।

/১২

শুধু ভারতীয় মহিলা দলকে নেতৃত্ব দেওয়াই নয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশের হয়ে একের পর এক কিংবদন্তি রচনা করেছেন চাকদাহ এক্সপ্রেস। এক ঝলক দেখে নেওয়া যাক, ক্রিকেট-দুনিয়ায় রেখে যাওয়া তাঁর ঐতিহাসিক মুহূর্তদের।

/১২

১৯৯৭-এ বল ইডেনে গার্ল হিসাবে ক্রিকেটের জগতে আত্মপ্রকাশ ঝুলনের। সে-সময় তিনি স্বপ্ন দেখতেন ব্যাটার হওয়ার। বাড়ি থেকে রীতিমতো পাঁচিল টপকে পালিয়ে গিয়ে অংশ নিতেন পাড়া ক্রিকেটে। সেই-সময়েই কোচ স্বপন সাধুর নজরে পড়ে যান ঝুলন। ঝুলনের বোলার হয়ে ওঠার পিছনে সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছে তাঁরই।

/১২

১৯৯৮ সাল। কয়েক মাস বেশি বয়স হওয়ার জন্য জাতীয় সাব-জুনিয়ার দলে জায়গা না পেয়ে ফিরতে হয়েছিল ঝুলনকে। ঠিক তার পরের বছরই জুনিয়র দলে আত্মপ্রকাশ তাঁর। তার তিন বছরের মধ্যে ২০০২ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক।

/১২

১৯৭৬ সালে আন্তর্জাতিক মহিলা ক্রিকেটে অভিষেক ভারতের। তবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট ম্যাচ জিততে ভারতকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল প্রায় ৩০ বছর। ২০০৬-০৭ সালের ইংল্যান্ড সফর। ইংল্যান্ডের মাটিতেই ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে নতুন ইতিহাস গড়ে ভারত। সে-দলের মেরুদণ্ড ছিলেন মিতালী রাজ এবং ঝুলন গোস্বামীই। শুধু পাঁচটি উইকেট শিকারই নয়, লিসেস্টারের পিচে অর্ধশতক করে নজির গড়েছিলেন ঝুলন।

/১২

২০০৭ সাল। ঝুলনের ক্যারিয়ারে এই বছরটা এক মাইলফলকই বটে। মাইলফলক ভারতীয় ক্রিকেটেরও। সে-বছর ‘আইসিসি উইমেন’স ক্রিকেটার অফ দ্য ইয়ার’-এর মুকুট ওঠে তাঁর মাথার। তখনও পর্যন্ত এই সম্মান পাননি কোনো ভারতীয় পুরুষ ক্রিকেটার। এর ঠিক পরেই ভারতের জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব আসে তাঁর হাতে।

/১২

অধিনায়কত্ব পাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই এক নতুন রেকর্ড তৈরি করেন ঝুলন। ২০০৮ সালে তাঁর নেতৃত্বেই মহিলা এশিয়া কাপের ট্রফি পায় ভারত। বিশ্বের চতুর্থ মহিলা ক্রিকেটার হিসাবে ১০০ উইকেট শিকারের নজির গড়েন ঝুলন।

/১২

২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার ক্যাথেরিন ফ্রিটজপ্যাট্রিককে টপকে মহিলাদের ওয়ানডে ক্রিকেটে বিশ্বের সর্বোচ্চ ইউকেট শিকারি হয়ে ওঠেন ঝুলন। সে-সময় তাঁর উইকেটের সংখ্যা ছিল ১৮০। এক বছরের মধ্যেই বিশ্বের প্রথম মহিলা বোলার হিসাবে ২০০-র গণ্ডিও পেরিয়ে যান চাকদাহ এক্সপ্রেস। আজও অক্ষত রয়েছে তাঁর সেই রেকর্ড। আন্তর্জাতিক ওয়ানডে-তে ২৫৩টি উইকেট নিয়ে আজও বিশ্বের শীর্ষ উইকেট-শিকারি তিনিই। তিন ফর্ম্যাটের ক্রিকেটে তাঁর মোট উইকেটের সংখ্যা ৩৫২।

/১২

এ-তো গেল শুধু পরিসংখ্যানের কথা। বিগত দু-দশকে ভারতীয় দলের অন্যতম স্তম্ভ ছিলেন ঝুলন। শুধু রান করা কিংবা উইকেট শিকারই নয়, দলের পারফর্মেন্সকেই সবসময় অগ্রাধিকার দিয়েছেন ঝুলন। ফর্ম খারাপ থাকায় স্বেচ্ছায় দল থেকে সরে যাওয়ার আবেদন জানাতেও কোনোদিন পিছপা হননি তিনি। তাছাড়াও বিশ্বকাপের ময়দানে ঘাতক স্পেল কিংবা দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করার জেদ, অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে পরবর্তী প্রজন্মের অজস্র তরুণীকে।

১০/১২

আন্তর্জাতিক সাফল্যের দিক থেকে দেখতে গেলে, ঝুলন সৌরভের মতো হতভাগ্যের দলে। একাধিক আন্তর্জাতিক ট্রফি থেকে ব্যক্তিগত সাফল্য, বিশ্বরেকর্ড, পুরস্কার— সবকিছু পেলেও তাঁর ক্যাবিনেটে নেই বিশ্বকাপ। দু-দু’বার বিশ্বকাপ ফাইনালে খেললেও, রানার্স আপ-এর তকমা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে ঝুলনকে। তবে ইডেনের সামান্য বল গার্ল থেকে গোটা বিশ্বে রাজত্ব করার এই কাহিনি, সিনেমার গল্পের থেকে এতটুকু কম নয় কোনো অংশেই।

১১/১২

ইংল্যান্ড-জয়ের মধ্যে দিয়েই জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল তাঁর। আজ সেই ইংল্যান্ডেরই ঐতিহাসিক লর্ডস-এর মাঠে ভারতীয় জার্সিতে খেলতে নেমেছেন ঝুলন। জীবনের ২০৪তম তথা শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ এটা। একদিকে যেমন তাঁর শেষ পারফর্মেন্সের দিকে তাকিয়ে আবেগতাড়িত গোটা দেশ, তেমনই আজ কাঁদো-কাঁদো রব ভারতীয় প্যাভিলিয়নে।

১২/১২

ঝুলনের শূন্যস্থান পূরণ করতে নতুন তারকার অভাব নেই ভারতে। কিন্তু ঝুলনের মতো দ্বিতীয় কোনো মোটিভেটর, শিক্ষিকা কাম সতীর্থকে কি পাবে ভারতীয় দল? সেই সিংহাসন খালি থেকে যাবে আগামী কয়েক বছর, তাতে সন্দেহ নেই কোনো…

Powered by Froala Editor