অভিশপ্ত চের্নোবিলের দিকে ক্রমশ এগোচ্ছে দাবানল, অশনি সংকেত ইউক্রেনে

আজ থেকে প্রায় চৌত্রিশ বছর আগের একটা ক্ষত এখনও দগদগে ইউক্রেনে। হ্যাঁ, চার্নোবিল। ১৯৮৬-তে পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্রে দুর্ঘটনার পর থেকেই পরিত্যক্ত এই শহর। কিন্তু, করোনা ভাইরাসের এই বিপর্যয়ের মধ্যে, আবার কি নতুন করে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে ঘুমিয়ে থাকা মৃত্যুপুরী?

গত বছর থেকেই পৃথিবীর নানান জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে দাবানল। এবার তার শিকার হল ইউক্রেনও। জ্বলছে জঙ্গলের পর জঙ্গল। প্রায় এক সপ্তাহ ধরেই চলছে প্রকৃতির এই ধ্বংসলীলা। তবে চিন্তার বিষয়, এই আগুন আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে অভিশপ্ত নগরী চের্নোবিলের দিকেই। আগুনের শিখা এখন চার্নোবিলের সেই পরিত্যক্ত শক্তিকেন্দ্র থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে। রাশিয়ার গ্রিনপিস ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, প্রবল সম্ভাবনা আছে আবার তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ছড়িয়ে পড়ার।

গত ৩ এপ্রিল, পরিত্যক্ত এলাকার পশ্চিমে একটি জায়গায় সূত্রপাত হয়েছিল এই অগ্নিকাণ্ডের। পুলিশি তদন্তে উঠে আসে, ২৭ বছর বয়সি এক ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবেই আগুন লাগিয়েছিল ওই অঞ্চলে। তারপর অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সেই আগুন।

ইউক্রেনের বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, অবস্থা আয়ত্তের মধ্যেই। কিন্তু, ওই অঞ্চলের সদ্য প্রকাশিত একটি ছবি এর ঠিক বিপরীত ইঙ্গিতই দিচ্ছে। গাঢ় কালো ধোঁয়া আর অগ্নিশিখা, সত্যিই যেন অশনি সংকেত। ইউক্রেন ইচ্ছাকৃতভাবেই প্রকাশ করছে না আসল তথ্য, এমনটাই মনে করছে গ্রিনপিস। সরকারিভাবে যা বলা হয়েছে, তার থেকেও বহুগুণ এলাকা জুড়ে ছড়িয়েছে আগুন, ধারণা বিশেষজ্ঞদের।

৪ এপ্রিল, ইউক্রেনের তরফে ঘোষণা করা হয়েছিল এই দাবানলের কথা। বলা হয়েছিল, ২০ হেক্টর জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে আগুন। কিন্তু সেই সময়ের স্যাটালাইটের ছবি দেখিয়েছিল, ১২ হাজার হেক্টর জমি জ্বলছে দাউ দাউ করে। বর্তমানে ৩৫ হাজার হেক্টরের বেশি জায়গায় ছড়িয়েছে আগুন।

বিপুল পরিমাণ গাছপালা ছাই হয়ে গেছে। প্রাণ হারিয়েছে অনেক বন্যপ্রাণীও। কিন্তু মূল আশঙ্কা অন্য জায়গায়। আগুন যত কাছে পৌঁছচ্ছে চের্নোবিলের, তত বাড়ছে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা। কারণ, উড়তে থাকা ধোঁয়ার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে তেজস্ক্রিয় পরমাণু। হয়তো পড়ছেও। কেননা চের্নোবিলের মূল শক্তিকেন্দ্র ছাড়াও, পার্শ্ববর্তী দীর্ঘ অঞ্চলের তেজস্ক্রিয় মাত্রা বেশ বিপজ্জনক। কাজেই ছড়িয়ে পড়া এই বিকিরণ প্রভাব ফেলতে পারে বিস্তীর্ণ জনবসতিপূর্ণ এলাকায়। ক্ষতি হতে পারে কল্পনাতীত।

চের্নোবিলের ট্যুর অপারেটর, ইরোস্লাভ ইয়েমেলিয়েঙ্কো সাবধান করেছেন বারবার। সবথেকে বিপজ্জনক তেজস্ক্রিয় বিকিরণ যে এলাকায়, সেই প্রিপ্যাট শহর থেকে আর মাত্র দু’কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে দাবানল। পরিস্থিতি যে যথেষ্ট কঠিনতর হচ্ছে, তা স্পষ্টই জানিয়েছেন তিনি। চের্নোবিলের নিকটবর্তী সকল শহরের সাধারণ মানুষকে সতর্ক করতে বলা হয়েছে আধিকারিকদের।

বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর জানিয়েছে এখনও পর্যন্ত চের্নোবিলে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রার পরিবর্তন হয়নি। পাশাপাশি ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভেও। অর্থাৎ এখনও ছড়ায়নি বিকিরণ। তবে বলাই বাহুল্য, ইউক্রেনের কাছে কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে অদূর ভবিষ্যতে।

More From Author See More

Latest News See More