আশেপাশে চোরাশিকারি এলেই গণ্ডারদের সাবধান করে ছোট্ট এক পাখি!

চোরাশিকারীদের কবলে পড়ে ক্রমশ শেষ হয়ে আসছে আফ্রিকার একশৃঙ্গ গণ্ডার। লাল ঠোঁটের অক্সপিকার পাখিও প্রায় বিলুপ্তির পথে। তার কারণ অবশ্য অন্য। চাষের কাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক কীটনাশকের প্রভাবেই প্রাণ হারাচ্ছে এই পাখি। তবে এই দুই বিরলপ্রায় প্রজাতির মধ্যে যে এক বন্ধুত্বের সম্পর্ক আছে, সেখবর আর কতজনই বা রাখেন?

তবে বিভিন্ন ছবিতেই দেখে থাকবেন, আফ্রিকার গণ্ডার প্রায় কখনওই একা থাকে না। তার পিঠের উপর সবসময় বসে থাকে একটি লাল ঠোঁটের অক্সপিকার পাখি। কেউ নিজের চোখে গণ্ডার দেখে থাকলেও এই দৃশ্য দেখতে পাবেন। সংখ্যাটা একের বেশি হলেও, এই দুই প্রাণী সবসময় একসঙ্গেই থাকে।

অক্সপিকার পাখির খাদ্য হল নানা ধরনের পরজীবী পোকা। গণ্ডারের মোটা চামড়ার মধ্যে এরকম অনেক পোকাই বাসা বাঁধে। অক্সপিকার সেইসব পোকা খেয়ে বেঁচে থাকে। মাঝে মাঝেই গণ্ডারের পিঠে ঠোকর দিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করে। এই তথ্য এতদিন বিশেষজ্ঞরা জানতেন। পাখিটির ঠোঁটের আঘাতে অবশ্য গণ্ডারের কোনো ক্ষতি হয় না। তবে বিপদের সময় যে এই পাখিই গণ্ডারকে সাহায্য করে, সে-কথা জানতেন কি? জানার কথাই নয়। কারণ বিজ্ঞানীরাও এতদিন একথা জানতেন না। তবে দুই পরিবেশবিদ, রোয়ান প্লজ এবং ওয়ানে লিংকলেটারের গবেষণায় উঠে এল সেই তথ্যই।

দীর্ঘদিন ধরে আফ্রিকার কিছু গণ্ডারের উপর পর্যবেক্ষণ চালাচ্ছিলেন তাঁরা। গণ্ডারের দৃষ্টিশক্তি যে বেশ কম, একথা সবাই জানে। তারপরেও নানা সময় চোরাশিকারিদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে তারা পালিয়ে যায় কী করে? এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছিলেন তাঁরা। দেখতে দেখতে পেয়েও গেলেন উত্তর। তবে গণ্ডার কিন্তু সত্যিই মানুষের উপস্থিতি সহজে টের পায় না। দেখতে পায় আসলে অক্সপিকার পাখিটি। এই পাখির দৃষ্টিশক্তি বেশ প্রখর। আর আশেপাশে মানুষ দেখতে পেলেই তারা চিৎকার করে সাবধান করে দেয় গণ্ডারকে। গণ্ডার তখন কখনও পালিয়ে যায়, অথবা কখনো আশেপাশে তাকিয়ে মানুষটিকে আক্রমণ করে। এভাবেই পরস্পরের উপর নির্ভর করে বেঁচে আছে দুই বিরল প্রজাতির প্রাণী।

তবে এই পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্যেও একের পর এক গণ্ডারের সংখ্যা কমে আসছে। দিনের বেলায় অক্সপিকার তাকে সচেতন করে দিলেও, রাতের বেলায় পাখিটি প্রায় কিছুই দেখতে পায় না। শিকারিরাও তাই বেছে নেয় পূর্ণিমার রাত। গণ্ডারের মোটা চামড়ার দাম যে অনেক। তাই মানুষের লোভের মূল্য দিতে ক্রমশ বিপদের মুখে পড়ছে পরিবেশ। অথচ পরিবেশের মধ্যে বিভিন্ন প্রাণীর সম্পর্ক কী দারুণ বন্ধুত্বের। মানুষও তো তাদের মতোই হতে পারত। অথচ সবার থেকেই সে আলাদা। প্রত্যেকেরই সাধারণ শত্রু যেন মানুষ।