ঘূর্ণিঝড়ের রেশ কাটতে না কাটতেই বন্যা, আশ্রয়হীন মৌসুনী দ্বীপের ৩ হাজার মানুষ

গত চারদিন ধরে একটানা বৃষ্টিপাতে বিপর্যস্ত দক্ষিণবঙ্গ। তবে লকডাউনের সময় নাগরিক জীবনে খানিকটা রবীন্দ্রসঙ্গীতের ছোঁয়া লাগলেও, এই অবিরাম বৃষ্টির জেরে সমুদ্র উপকূলের জনজীবন চরম বিপদের মুখে। বিশেষ করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বন্যা পরিস্থিতি রীতিমতো উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। একের পর এক বাঁধ ভেঙে সমুদ্রের জল ঢুকে পড়ছে বন্যার মতো। আর এর মধ্যেই অন্তত ৬টি বাঁধ ভেঙেছে পর্যটনের জন্য বিখ্যাত মৌসুনী দ্বীপে।

মুরিগঙ্গা এবং চিনাই নদীর মাঝে মৌসুনী দ্বীপে ছুটি কাটাতে ভিড় জমান অনেকেই। আর পর্যটন শিল্পকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে জনজীবন। যদিও কৃষিকাজ এবং মাছচাষের সঙ্গেও যুক্ত অনেকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবী, মৌসুনী মৌজা অঞ্চলে কোনো বাঁধের অস্তিত্ব না থাকায় অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে সেচ দপ্তরের কাছে বাঁধের জন্য আবেদন জানানো হলেও তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এর মধ্যেই প্রবল বৃষ্টি এবং ভারী জোয়ারে উপকূলের ১.৫ কিলোমিটার এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। তবে যেখানে বাঁধ দেওয়া হয়েছে সেখানেও বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় পঞ্চায়েত সূত্রে জানানো হয়েছে ৬টি বাঁধ জলের স্রোতে ভেঙে গিয়েছে। যদিও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের সূত্র থেকে জানানো হয়েছে, বাঁধ ভাঙার খবর সম্পূর্ণ ভুয়ো। বিশেষ করে আমফানের পর নতুন করে বাঁধ দেওয়া হয়েছে, তাই সেসব ভেঙে পড়ার কোনো সম্ভাবনা এখনই নেই।

যদিও বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে ইতিমধ্যে সেচ দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার পাঠানো হবে বলেও জানানো হয়েছে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে। পাশাপাশি দুর্গত মানুষদের ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। আর এর মধ্যে অন্তত ৩ হাজার মানুষ তাঁদের বাসস্থান হারিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। তবে শুধুই মৌসুনী দ্বীপ নয়, সাগরদ্বীপ এবং জেলার অন্যান্য এলাকাতেও বন্যার জল ছড়িয়ে পড়েছে। রায়মঙ্গল, বিদ্যাধরী, কালিন্দি, গৌরেশ্বর নদীর জল ইতিমধ্যে বাঁধ ভেঙে বসতি অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। আর লবণাক্ত জলের স্রোতে কৃষিকাজ এবং মাছচাষ নষ্ট হতে চলেছে। কিছুদিন আগেই আমফান এবং তার কিছুদিন আগে বুলবুলের প্রকোপে সারা দক্ষিণ ২৪ পরগনা উজাড় হয়ে গিয়েছিল। সেই দুঃসময় কাটতে না কাটতেই এসে গেল বন্যা পরিস্থিতি। এর জন্য কি প্রাকৃতিক দুর্যোগই একমাত্র দায়ী? নাকি প্রতিরক্ষার জন্য যেসব ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন সেসব আদৌ নেওয়া হয়নি? প্রশ্ন তুলছেন দুর্গত মানুষরাই। উপকূল অঞ্চলে অতিবর্ষণ বা ভারী জোয়ার কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। কিন্তু তার জন্য প্রতিরক্ষামূলক প্রযুক্তি তো ইঞ্জিনবিয়ারদের জানা। তাহলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি আদৌ?

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বন্যাবিধ্বস্ত অসম, আগাম সতর্কতা পেতে বিশেষ পূর্বাভাস যন্ত্র বসল গুয়াহাটিতে