শরণার্থীর জন্য আহ্বান ফিনল্যান্ডের, শুধুই আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা?

জনসংখ্যা মাত্র ৫৫ লাখের কিছু বেশি। দুঃখ যেন এই দেশের সীমানায় থমকে দাঁড়িয়ে থাকে। বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দেশ ফিনল্যান্ড। তবে সেই দেশও রীতিমতো বড়ো সমস্যার মুখে। আর এই সমস্যার সমাধানের জন্যই সম্প্রতি শরণার্থীদের আশ্রয়ভূমি হিসাবে ফিনল্যান্ডের সীমানা খুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছে সে-দেশের সরকার। হ্যাঁ, গোটা পৃথিবীতে যখন শরণার্থী সংখ্যা অন্যতম আলোচনার বিষয়, ফিনল্যান্ড এই দিক থেকেও ব্যতিক্রম তৈরি করতে চলেছে। কিন্তু শুধুই আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান নয়, ফিনল্যান্ডের এই সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে নিজস্ব স্বার্থ।

বিগত ৬ দশক ধরে ফিনল্যান্ডের অর্থনীতিতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। ছোট্ট এই দেশে অভাব বলতে কিছুই নেই। কিন্তু এই ৬ দশকেই থমকে গিয়েছে জনসংখ্যার পরিসংখ্যানটাও। এই ৬০ বছরে জনসংখ্যা বেড়েছে মাত্র ১১ লক্ষ। আর তাই বর্তমানে কর্মক্ষম মানুষের থেকে অবসরপ্রাপ্ত মানুষের সংখ্যা অনেকটাই বেশি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের ৩৯ শতাংশ মানুষই কাজের নির্দিষ্ট বয়স, অর্থাৎ ৬৫ বছরের সীমানা পেরিয়ে গিয়েছেন। ফলে শুধু যে তরুণ প্রজন্মের উপর পারিবারিক চাপ এসে পড়ছে, তাই নয়। সেইসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত মানুষদের পেনসন দেওয়ার মতো উপযুক্ত সংস্থান নেই। আর এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতি বছর অন্তত ২০-৩০ হাজার কর্মচারী নিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছে কোম্পানিগুলি। আর এক্ষেত্রে স্পেন এবং ফ্রান্সের মতো ইউরোপীয় দেশগুলির পাশাপাশি রাশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়া, বিশেষত ভারতীয় কর্মীদের নিয়োগের চিন্তাভাবনা করছে সরকার।

তবে ফিনল্যান্ডের এই প্রচেষ্টা কতটা সফল হবে, তাই নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। ২০১৩ সালে ইউরোপীয় দেশগুলি থেকে কর্মচারী নিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছিল ফিনল্যান্ড। কিন্তু এই ৮ বছরে বহু মানুষ কাজে যোগ দিলেও পরে সে-দেশ ছেড়ে ফিরে গিয়েছেন। হেলসিনকি শহরের মেয়রের কথায়, দেশে প্রত্যেক কর্মচারীকে সমান অর্থনৈতিক সুযোগ দেওয়ার পরিকাঠামো আছে। কিন্তু এখনও বহু মানুষের মধ্যে অন্য দেশের মানুষদের অবজ্ঞার চোখে দেখার প্রবণতা থেকেই গিয়েছে। বিশেষ করে বিশ্বের সুখীতম দেশের স্বীকৃতি পাওয়ায় এই সমস্যা আরও বেড়েছে। ২০১৫ সালে এক স্প্যানিস নার্স অভিযোগ তুলেছিলেন, তাঁর হাসপাতালের উচ্চপদস্থ কর্মচারী আলোচনার শেষে হ্যান্ডশেক করতেও অস্বীকার করেছিলেন। তাই শেষ পর্যন্ত অন্য দেশের কর্মচারীদের আকৃষ্ট করতে এই মানসিকতারই পরিবর্তন ঘটাতে হবে বলে মনে করছেন বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির কর্ণধাররা।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
আগাগোড়া কাঠের তৈরি স্যাটেলাইট, মহাকাশে পাঠাচ্ছে ফিনল্যান্ড