বুলিং থেকে বাঁচতে রং-পরিবর্তন, লিঙ্গবৈষম্য রয়েছে হামিংবার্ড সমাজেও!

একুশ শতকে দাঁড়িয়ে আজও লিঙ্গবৈষম্য স্পষ্ট আমাদের সমাজে। পুরুষতান্ত্রিকতা এখনও সমানাধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে মহিলাদের। তবে শুধু মানুষই নয়, লিঙ্গভিত্তিক এই বিভাজন দেখা যায় বন্যপ্রাণীদের মধ্যেও। সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এল এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। মহিলা হওয়ার জন্য ক্রমাগত বুলিং (Bullying) এবং আক্রমণের শিকার হয় হামিংবার্ডরা (Humming Bird)। আর এই লিঙ্গ-হিংসার হাত থেকে বাঁচতেই ক্রমশ পালকের রং বদলাচ্ছে মহিলা পাখিরা। 

সম্প্রতি, পানামার বিজ্ঞানীদের করা একটি সমীক্ষায় উঠে এল এমন তথ্যই। হোয়াইট-নেকড জ্যাকোবিন। এই বিশেষ হামিংবার্ড প্রজাতির ওপরেই বিস্তারিত গবেষণা চালিয়েছিলেন পানামার গবেষকরা। মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকায় বহুলভাবে খুঁজে পাওয়া যায় হামিংবার্ডের এই প্রজাতিকে। পালকের রং দেখেই পৃথকীকরণ করা যায় এই প্রজাতির পুরুষ এবং মহিলাদের। স্বাভাবিকভাবে পুরুষ জ্যাকোবিনের পালকের রং মহিলাদের থেকে উজ্জ্বল হয়। পাশপাশি মহিলাদের মাথার পালকের রং হয় সবুজাভ। অন্যদিকে পুরুষদের ঠোঁট থেকে কণ্ঠ পর্যন্ত নীল পালকে ঢাকা থাকে। তবে বর্তমানে ক্রমশ বদলাচ্ছে সেই চরিত্র। অভিযোজিত হচ্ছে মহিলারা। চলতি মাসেই ‘কারেন্ট বায়োলজি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাপত্র। জড়িত ছিলেন নিউইয়র্কের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিয়াটেলের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।

সাধারণত, জন্মাবস্থায় জ্যাকোবিন প্রজাতির পুরুষ এবং মহিলা পাখিদের গায়ের রং একই থাকে। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ বদলে যায় মহিলাদের পালকের রং। কয়েক দশক আগে পর্যন্তও এই চরিত্রই বহাল থাকত জ্যাকোবিন হামিংবার্ডের মধ্যে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ৩০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা পাখিই ধরে রাখছে তাদের শৈশবের পালকের রং। 

আরও পড়ুন
পুরুষসঙ্গীর সাহায্য ছাড়াই সন্তানজন্ম! বিলুপ্তপ্রায় পাখির কাণ্ডে অবাক বিজ্ঞানীরা

এই অভিযোজনের কারণ খুঁজতেই গবেষণার পথে পা দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। মিস্ট নেটের সাহায্যে প্রায় ৪০০ হামিংবার্ডকে গবেষণার কাজে বন্দি করা হয় অরণ্য থেকে। তাদের দেহে সংযুক্ত করা হয় মাইক্রোচিপ। জিনগত পরীক্ষার মাধ্যমে পৃথক পৃথকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছিল তাদের লিঙ্গ। তারপর দীর্ঘদিন ধরে খাঁচায় বন্দি পাখিগুলির চারিত্রিক আচরণ ও গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন গবেষকরা। সেখানেই ধরা পড়ে, পুরুষ জ্যাকোবিন হামিংবার্ডের আক্রমণাত্মক চরিত্র। মহিলাদের পালক ছিঁড়ে নেওয়া থেকে শুরু করে, তাদের ক্রমাগত বিরক্ত করা কিংবা বাসা থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে পুরুষরা। তবে যে সকল মহিলা পাখিদের পালকের রঙের বিবর্তন দেখা গেছে, তাদের ক্ষেত্রে এই ঘটনা দেখা যায় না বললেই চলে। এই পরীক্ষা থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়, পালকের রং পরিবর্তন আসলে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। 

আরও পড়ুন
টুইটারের পাখি ‘ল্যারি’ প্রজাতির! কে এই ল্যারি?

পুরুষ সঙ্গীকে আকর্ষণ করতে এর আগে বহু প্রজাতির পাখিকেই দেখা গেছে গায়ের রং পরিবর্তন করতে। তবে লিঙ্গবৈষম্য থেকে বাঁচতে এহেন অভিযোজন সত্যিই বিরল প্রাণীজগতে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন উপজাতি সম্প্রদায়ের লোককথায় হামিংবার্ডকে বর্ণনা করা হয়েছে যোদ্ধা পাখি হিসাবে। উল্লেখিত হয়েছে লিঙ্গভিত্তিক দ্বন্দ্বের কথা। সেসব লোককথা নিছক কল্পনা নয়, তাও প্রমাণিত হল এবার। অরণ্যের কোলে বসবাসের জন্যই হয়তো বিজ্ঞানীদের আগে এই লিঙ্গবৈষম্য ধরা পড়েছিল নেটিভ আমেরিকানদের চোখে। 

আরও পড়ুন
জলবায়ু পরিবর্তনে চেহারা পাল্টাচ্ছে পাখিদেরও!

Powered by Froala Editor