বিগত ১০ বছরে ইংরাজিতে কথা বলার প্রবণতা বেড়েছে দেশে, জানাল সমীক্ষা

দেশজুড়ে শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে কোন ভাষাকে বেছে নেওয়া হবে, এই বিতর্ক চলেছে দীর্ঘদিন ধরে। এখনও তার মীমাংসা হয়েছে কি? মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকার যেন আজও এক অধরা স্বপ্ন হয়ে থেকে গিয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত জাতীয় শিক্ষানীতিতে তিন ধরনের ভাষার উপরেই জোর দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক স্তরে মাতৃভাষায় শিক্ষা এবং তারপর হিন্দি এবং ইংরাজি দুই মাধ্যমেই গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেশে ভাষাশিক্ষার পরিস্থিতি ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে? কী বলছে বিশেষজ্ঞদের সমীক্ষা?

সম্প্রতি ইন্দিরা গান্ধী ইনস্টিটিউট অফ ডেভালাপমেন্ট রিসার্চ সংস্থার গবেষকরা এই বিষয়টাই খতিয়ে দেখতে সমীক্ষা চালিয়েছেন দেশজুড়ে। আর তার ফলাফলে দেখা যাচ্ছে দেশজুড়ে হিন্দি ভাষার আগ্রাসন বাড়তে থাকলেও ইংরাজি ভাষা ক্রমশ একটা বড়ো জায়গা নিচ্ছে। শুধুমাত্র শিক্ষাক্ষেত্রেই নয়, ব্যবহারিক জীবনেও ক্রমশ ইংরাজি ভাষা হয়ে উঠছে এক বিকল্পহীন মাধ্যম। আর এমনটা ২০০ বছরের ইংরেজ শাসনের সময়েও দেখা যায়নি।

কিন্তু ঠিক কী কারণে এইভাবে ইংরাজির উপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে? তারও উত্তর আছে সমীক্ষার রিপোর্টে। দেখা গিয়েছে দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন মাতৃভাষার মানুষ যখন একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেয়েছে, তখনই সেই যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে উঠেছে ইংরাজি ভাষা। ঠিক যেন লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা। আর এই অভিঘাত এমন হয়েছে যে অনেকেই ছোটো থেকেই মাতৃভাষার বদলে ইংরাজি ভাষাকেই বেছে নিয়েছে।

সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে দেশের প্রায় প্রতিটা রাজ্যেই মাতৃভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা কমে আসছে। এমনকি দক্ষিণের রাজ্যগুলিও এর ব্যতিক্রম নয়। ২০০৭-০৮ সালে দক্ষিণ ভারতের ১২ শতাংশ শিশু ইংরাজি ভাষায় কথা বলত। সেই সংখ্যাটা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ শতাংশ। আর মহারাষ্ট্র থেকে উত্তর ভারতে মাতৃভাষার উপর নির্ভরশীলতা কমেছে প্রায় ৭ থেকে ৮ শতাংশ। তবে এর মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ। এ-রাজ্যে ইংরাজি শিক্ষার প্রবণতা বাড়লেও বাংলা ভাষায় কথা বলার প্রবণতাও বিশেষ কমেনি। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে রাজ্যের ৮৫ শতাংশ মানুষই বাংলা ভাষায় কথা বলেন। এর মধ্যে অনেকের মাতৃভাষা অবশ্য আলাদা।

আরও পড়ুন
শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে মাতৃভাষাই, নির্দেশ জাতিপুঞ্জের

তবে এই বাস্তব চিত্র যেন ইংরাজি ভাষার উপর নির্ভরশীলতা নিয়ে বিতর্ককে আরও উস্কে দিয়ে যায়। মানুষ যখন নিজেই ইংরাজি ভাষাকে বেছে নিচ্ছেন, তখন রাষ্ট্রীয় নীতির সাহায্যে কি ভাষার বৈচিত্র্যকে রক্ষা করা যাবে? নাকি এই সমাজের মধ্যে কোথাও কোনো ঔপনিবেশিক প্রবণতা থেকে গিয়েছে, স্বাধীনতার ৭৪ বছর পরেও যার কবল থেকে মুক্ত নই আমরা?

আরও পড়ুন
প্রাতিষ্ঠানিক গুরুত্ব কমলেও, রোজের জীবনে মফঃস্বলের ‘আশ্রয়’ আজও মাতৃভাষাই

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন