আবারও নক্ষত্রপতন বাংলা সাহিত্যে, প্রয়াত কবি শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়

‘রাত বারোটার পর কলকাতা শাসন করে চার যুবক।’ —কয়েক দশক পেরিয়ে আজও কিংবদন্তি হয়ে রয়েছে এই অমোঘ বাক্য। শক্তি, সুনীল, শরৎ ও সন্দীপন— বাংলা কবিতার এই চার দামাল তরুণ কবিই মাতিয়ে রাখত রাতের কলকাতাকে। ‘কলকাতা শাসনের জার্নাল’ গদ্য সংকলনে সেই বোহেমিয়ান যাপনের ছবিকেই তুলে ধরেছিলেন শরৎকুমার মুখোপাধ্যায় (Sharat Kumar Mukhopadhyay)। যার ছত্রে ছত্রে ছড়িয়ে রয়েছে তিলোত্তমার প্রাণস্পন্দন। সেই স্পন্দনই যেন থেমে গেল হঠাৎ।

গতকাল রাতেই রাজত্ব ছেড়ে অন্য দুনিয়ায় পাড়ি দিলেন বাংলার সাহিত্যজগতের অন্যতম কবি শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়। শেষ বয়সে স্মৃতিভ্রংশ হলেও, শারীরিকভাবে সুস্থই ছিলেন তিনি। গতকাল গভীর রাতে হঠাৎ করেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হয় তাঁর। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করা হলেও, বিফলে যায় সকল চেষ্টা। ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক কেড়ে নেয় প্রাণ। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।

১৯৩১ সালে ওড়িশার পুরীতে জন্ম শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়ের। তবে বেড়ে ওঠা কলকাতাতেই। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকতা শেষ করার পর উচ্চতর শিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি দেন তিনি। তারপর কলকাতায় ফিরে পেশা হিসাবে বেছে নেওয়া চ্যাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের পথ। সাহিত্যযাপনও শুরু হয়ে গেছে ততদিনে। তবে সবটাই পরিচয় গোপন রেখে। তখনও পর্যন্ত কবিতার জগতে তাঁর পরিচয় ‘নমিতা মুখোপাধ্যায়’। 

কে এই নমিতা মুখোপাধ্যায়— গুঞ্জন ছড়িয়েছিল তৎকালীন সাহিত্যমহলে। সেই রহস্যের যবনিকা পতন করেছিলেন স্বয়ং শরৎকুমার। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উত্তর কলকাতার বাড়িতে নিজেই গিয়ে ‘ধরা’ দিয়েছিলেন তিনি। বাকিটা ইতিহাস। কৃত্তিবাস, সাহিত্য আন্দোলন, রাতের কলকাতা শাসন— এসব কিংবদন্তি সকলেরই জানা কম-বেশি। মাত্র ৫২ বছর বয়সে কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর নিয়ে সম্পূর্ণভাবে সাহিত্যযাপনের পথ বেছে নেন তিনি। বিশেষত নব্বইয়ের দশকে তাঁর কবিতা আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল গোটা বাংলায়। 

আরও পড়ুন
কবিতার দেশে ‘শক্তি-সাধনা’

তাঁর লেখা ‘আছি সংযত, প্রস্তুত’, ‘কাল ছিল ডাল খালি’, ‘অন্ধকার লেবুবন’, ‘আহত ভ্রুবিলাস’-এর মতো গ্রন্থ বদলে দিয়েছিল বাংলা কবিতার ধারাকে। সরস, স্বতঃস্ফূর্ত গদ্যপ্রবাহে বাঁধা পড়েছিল কলকাতার জীবনচর্চা, কবিতাযাপনের ইতিকথা। পেয়েছেন অজস্র সম্মাননা, অনুজ কবিদের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা। শেষ বয়সে অসুস্থতার কারণে সাহিত্যজগৎ থেকে খানিকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেও, অভিভাবক হয়ে তরুণ প্রজন্মের মাথায় ছাতা ধরেছিলেন তিনি। কৃত্তিবাসের আদি প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের প্রয়াণে হারিয়ে গেল সেই অভিভাবকতার ছাদটাই…

আরও পড়ুন
‘কচু ঘেঁচু’ জোটে দুর্গার কপালে! কবিতা ফাঁদলেন বঙ্কিম

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
জলের লাইনের বিবাদকে সঙ্গে নিয়েই আমার কবিতা চর্চা চলে, বলেছিলেন দিনেশ স্যার

More From Author See More