দূষণের প্রভাবে নষ্ট হচ্ছে এলিফ্যান্টা দ্বীপ, নেই কোনো সংরক্ষণের ব্যবস্থা

ভারতের পশ্চিম উপকূলে মুম্বাই নগরীর কাছেই হাজার বছরের ইতিহাসের সাক্ষী এলিফ্যান্টা গুহা। সমুদ্র পেরিয়ে মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করলেই গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া। এলিফ্যান্টা গুহা আর গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া দেখতে দেশবিদেশ থেকে বহু পর্যটক এসে ভিড় জমান। মুম্বই অ্যাপোলো বন্দর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে ঘরপুরী দ্বীপ। পর্তুগিজরা নাম রেখেছিলেন এলিফ্যান্টা। সেই থেকেই দ্বীপের উপর গুহাগুলির নাম হয়ে যায় এলিফ্যান্টা গুহা। গুহার বাস-রিলিফ ভাস্কর্যগুলি খোদাই করা হয়েছিল আনুমানিক পঞ্চম থেকে অষ্টম শতকের মধ্যে। অর্থাৎ অজন্তার গুহাচিত্রের সমসাময়িক এই মূর্তিগুলি। শিবের নানা দেহভঙ্গির সাথে সাথে হিন্দু-পুরাণের নানা কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে ভাস্কর্যের মাধ্যমে। সেইসঙ্গে দ্বীপের মধ্যে রয়েছে একটি বৌদ্ধস্তুপও। পর্তুগিজদের বিজয়স্বারক হাতির মূর্তিটি বর্তমানে ভাও দাজি লাদ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত।

গুহাগুলিকে ঘিরে থাকা ম্যানগ্রোভ অরণ্যসহ সম্পূর্ণ এলিফ্যান্টা দ্বীপকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান বলে উল্লেখ করে ১৯৮৭ সালে। অন্যদিকে, ১৯৫০ সাল থেকে সরকারিভাবে গুহাগুলি সংরক্ষণের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সেসব কথার কথা। মহারাষ্ট্র সরকার এবং ভারতের পুরাতত্ত্ব গবেষণা সংস্থার সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। মুম্বই বন্দরকে ঘিরে আরবসাগরের জল ক্রমশ দূষিত হচ্ছে আর তার প্রভাব পড়ছে দ্বীপের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের উপর। তারপর সারা বছর ধরে হাজার হাজার পর্যটকের ভিড়।

মহারাষ্ট্র ট্যুরিজমের লোগতেই রয়েছে গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া আর এলিফ্যান্টা গুহার ত্রিমস্তক শিবমূর্তি। আর সেই বিপুল পর্যটকদের কারণেই দ্বীপের মধ্যে বেশ বড়ো ধরনের ব্যবসাক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। হকারদের বিক্রি করা প্লাস্টিকের জলের বোতল আর খাবারের প্যাকেট পড়ে থাকতে দেখা যায় এদিক ওদিক। তারমধ্যে কিছুদিন হল দ্বীপের মধ্যে চালু হয়েছে টয় ট্রেন। আর এসবের সঙ্গে মুম্বাই বন্দর আর BARC-এর নিকটবর্তী গবেষণাগার থেকে ছড়িয়ে পড়া দূষণের প্রভাব তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে জঙ্গলের ক্ষতির পাশাপাশি ম্লান ও ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে গুহার মূর্তিগুলিও।

ভারতের বিভিন্ন ঐতিহ্য ও স্থাপত্য ইতিমধ্যেই হারিয়ে গেছে যথাযথ সংরক্ষণ ও সচেতনতার অভাবে। এর জন্য অনেকাংশেই দায়ী মানুষ। এখনও যদি সচেতন না হওয়া যায়, এলিফ্যান্টা দ্বীপের মতো আরও অনেক ইতিহাসই যে শুধুমাত্র বইয়ের পাতায় ঠাঁই নেবে একসময়, তা বলাই বাহুল্য। আমরা কি সকলে মিলে আরেকটু সতর্ক হতে পারি না?

তথ্য ঋণ – দ্য হিন্দু