বিশ্ব উষ্ণায়নের ভয়ঙ্কর দিক, ২০৫০-এ ভারত মহাসাগরেও দেখা দেবে ‘এল-নিনো’

আজ থেকে প্রায় ২১ হাজার বছর আগের কথা, পৃথিবীর বুকে তখন শেষ তুষারযুগের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। ভারত মহাসাগরের বুকেও তখন অসংখ্য হিমবাহের উপস্থিতি। আর এই হিমবাহের প্রভাবেই প্রতি বছর সমুদ্রের উষ্ণতার হ্রাস-বৃদ্ধি ছিল রীতিমতো বেশি। প্রশান্ত মহাসাগরে যেমনটা আজও দেখা যায়। এই ঘটনাকে বলা হয় এল-নিনো। তবে কালক্রমে ভারত মহাসাগরের জলবায়ু শান্ত হল। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এবং নিয়মিত বৃষ্টিপাতের ফলে সমুদ্রের চারিদিকে গড়ে উঠল উর্বর কৃষিজমি। তবে ভারত মহাসাগরের সেই এল-নিনো ফিরে আসতে আর বেশি দেরি নেই। অন্তত টেক্সাস ইউনিভার্সিটির আবহাওয়াবিদ পেদ্রো ডিনেজিওর গবেষণা অনুযায়ী, এই শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়েই ভারত মহাসাগরের বুকে আবার বার্ষিক উষ্ণতার দ্রুত হ্রাস-বৃদ্ধি শুরু হতে চলেছে। তাঁর কম্পিউটার স্টিমুলেশনে ধরা পড়েছে সেই তথ্য।

অধ্যাপক পেদ্রোর এই গবেষণার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন আরও অনেক ভূতত্ত্ববিদ। তাঁদের অনেকে আবার ভারতীয় বংশোদ্ভুত। অ্যারিজোনা ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কৌস্তভ তিরুমালাই মনে করছেন, সমুদ্রের আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের জন্য দায়ী বিশ্ব উষ্ণায়ন। পৃথিবীর গড় উষ্ণতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বদলাচ্ছে মৌসুমী বায়ুর চরিত্র। আর এর ফলে কিছুদিনের মধ্যেই তার গতিপথ সম্পূর্ণ পরিবর্তন হতে পারে। আর তাহলেই ভারত মহাসাগরের বুকে দেখা দেবে এল-নিনো। এই ঘটনার যথেষ্ট প্রভাব পড়তে পারে স্থলভাগেও। আফ্রিকার পূর্বদিকে এবং দক্ষিণ ভারতে খরার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়া অসম্ভব নয়। তেমনই ইন্দোনেশিয়া উপকূলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে আপাতত সবটাই অনুমান মাত্র। আরও বিশদে গবেষণা না করলে বাস্তবের চেহারা ঠিক কী দাঁড়াবে, বোঝা সম্ভব নয়।

পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের চেনা প্রকৃতি বদলে যাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। মানুষের সৃষ্ট দূষণই তার প্রধান কারণ। আর এর আসন্ন প্রভাব নিয়ে চিন্তিত সমস্ত বিজ্ঞানীরাই। কিন্তু এর মধ্যে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, সেই আসন্ন পরিবেশের সঙ্গে তুষারযুগের আবহাওয়ার সাদৃশ্য। ঠিক কীভাবে ২১ হাজার বছর আগের পরিবেশ ফিরে আসার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে, সে সম্মন্ধে এখনও আলোকপাত করতে পারেননি কেউই। অবশ্য ইন্ডিয়ান ট্রপিক্যাল মেটেরোলোজি ইনস্টিটিউটের গবেষক সূর্যচন্দ্র রাওয়ের মতে, সম্পূর্ণ গবেষণাই এখন ভ্রূণাবস্থায় আছে। আরও কিছু মডেলের সঙ্গে মিলিয়ে না দেখলে স্পষ্ট কোনও উত্তর পাওয়া সম্ভব নয়।