১৪ হাজার মুমূর্ষুর শেষ ইচ্ছে পূরণের দায়িত্ব নিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের এই ব্যক্তি

রৌদ্রকরোজ্জ্বল একটি দিন। চারিদিকে ঝলমল করছে প্রকৃতি। বিস্তীর্ণ লাল ফুলের ক্ষেত। যেন ‘আগুন লেগেছে বনে বনে’। এই দৃশ্যের পাশেই বসে আছেন এক বৃদ্ধা। আরামকেদারায় নয়, একটা লম্বা হাসপাতালের বিছানায়। তাঁর সারা গায়ে শেষ বিকেলের রোদ এসে লেগেছে। তাঁরও তো যাওয়ার সময় হয়ে এল। তাহলে কেন কষ্ট ধরে রেখেছেন? কেন নিজের শেষ ইচ্ছা পূরণ করবেন না! চারিদিকে করোনার ভয়, তাতে কী হয়েছে এমন। মৃত্যু তো এমনিও আসবে, তা বলে কি এমন সুন্দর পৃথিবীকে দু’চোখ ভরে দেখব না?

এমনই অদ্ভুত ঘটনা ঘটল নেদারল্যান্ডসে। আর যিনি ঘটালেন, তাঁর নাম কিইস ভেল্ডবোয়ের। পেশায় একজন প্যারামেডিক। বেশ অনেকদিন ধরেই তিনি লক্ষ করছিলেন হাসপাতালের অসুস্থ মানুষদের। বিশেষ করে, যারা মরণাপন্ন। এদের অনেকেই বৃদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু দু’চোখে এখনও সোনালি স্বপ্ন। শেষ নিঃশ্বাসটির আগে যদি একবার নিজের প্রিয় ঘোড়াটির দেখা পাওয়া যেত। কিংবা, সুন্দর রোদের মধ্যে টিউলিপের বাগানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে যেতে পারতেন। কত সৌন্দর্য এখনও দেখা বাকি। পৃথিবীটাকে তো ভালো করে দেখাই হল না। ওই ইচ্ছাগুলোই একমনে জড়ো করছিলেন ভেল্ডবোয়ের। একসময় নিজেই হয়ে উঠলেন ‘সান্টা ক্লস’। প্রায় ১৪ হাজার মরণাপন্ন রোগীকে তিনি নিয়ে এলেন হাসপাতালের বাইরে। তাঁদের গায়ে যাতে একটু শান্তির পরশ লাগে, সেইজন্যই এই চেষ্টা।

যে বৃদ্ধ তাঁর প্রিয় ঘোড়াটির কাছে যেতে চেয়েছিলেন, তিনি তার মুখে চোখে হাত বুলিয়ে হাসিমুখে বিদায় জানালেন। খোলা বাগানে নিয়ে গিয়েছিলেন কয়েকজনকে, যারা একটু চোখ মেলে পৃথিবী দেখতে চেয়েছিলেন। প্রত্যেককেই নজরে রাখা হয়েছিল; সমস্ত চিকিৎসার সরঞ্জামও উপস্থিত ছিল। তার ওপর রয়েছে করোনার ভয়। নেদারল্যান্ডে ইতিমধ্যেই চলছে লকডাউন। মানুষ মারা যাচ্ছে, আক্রান্ত হয়ে ঘরবন্দি হচ্ছেন। তাতে কী হয়েছে? করোনা বা অন্যান্য রোগ কি এই সৌন্দর্যকে হারাতে পারবে? জীবনকে হারাতে পারবে? মৃত্যুকে জড়িয়ে ধরার আগে সেই জীবনের কাছেই ফিরে যেতে চেয়েছিলেন এই ১৪ হাজার মানুষ। এখন ইচ্ছাগুলো পূরণ হওয়ার পর নিশ্চয়ই বলতে পারবেন, ‘মরণ রে, তুঁহু মম শ্যাম সমান’…