এখনও লকডাউন শিথিল হয়নি। করোনার থাবা এখনও জাঁকিয়ে রয়েছে আমাদের ওপর। তাও রাস্তাঘাটে বেরিয়ে পড়ছেন এলাকাবাসীরা। অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছেন চারিদিকে। কারোর উদ্বিগ্ন মুখ, কেউ ক্রমাগত ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সুপার সাইক্লোন আমফান এভাবেই দক্ষিণবঙ্গের একটা বড়ো অংশকে তছনছ করে দিয়েছে। কলকাতা-সহ দুই চব্বিশ পরগনা এখনও ধ্বংসস্তূপের চেহারায়। তার ওপর বিদ্যুৎ নেই বেশিরভাগ জায়গায়; খাবার জলটুকুও পাচ্ছেন না অনেকে। করোনা ভুলে গিয়ে তাই মরিয়া হয়ে রাস্তাতেই নেমে এসেছেন মানুষগুলো।
যেদিকে তাকানো যাবে, ধ্বংস আর ধ্বংস। ভেঙে গেছে গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি। তার ছিঁড়ে পড়ে আছে জমা জলে। কোথাও কোথাও ট্রান্সফরমার পুড়ে গেছে। সব মিলিয়ে শহর ও চব্বিশ পরগনার ‘বৈদ্যুতিক চিত্র’টা মিলেমিশে এক হয়ে গেছে। এখনও বহু জায়গা অন্ধকারে। তারই মধ্যে ঘটছে দুর্ঘটনা। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। তারই মধ্যে দিন-রাত এক করে কাজ করে যাচ্ছেন বিদ্যুৎকর্মীরা। সিইএসসি থেকে স্টেট ইলেক্ট্রিসিটি— সব জায়গায় ব্যস্ততা তুঙ্গে। একের পর এক ফোন ঢুকছে কন্ট্রোল রুমে। অভিযোগ, বিক্ষোভ আর অন্ধকার— দক্ষিণবঙ্গের ছবিটাই যেন বদলে গেছে এক রাতে।
এখনও অবধি নিউ গড়িয়া, সিঁথি, কসবা, মুকুন্দপুর-সহ বহু অঞ্চলে বিদ্যুৎ আসেনি। শহর পেরিয়ে গ্রাম, মফস্বলে গেলে এই সংখ্যাটা আরও বহুগুণ বাড়বে। বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল পরিষেবা, নিকাশি পাম্পিং স্টেশনের কাজও স্তব্ধ। তারই মধ্যে উঠে আসছে নানা প্রশ্ন, নানা আবেদন। বিদ্যুৎকর্মীরা বারংবার বলছে একটু ধৈর্য ধরে থাকতে। আমফান গোটা চব্বিশ পরগনাকে ছারখার করে দিয়েছে। গাছ পড়ে আছে, তার ছিঁড়ে পড়ে আছে ইতিউতি, ট্রান্সফরমারের অবস্থা খারাপ। এর মধ্যে যদি বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করে দেওয়া হয়, মৃত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এক ধাক্কায় প্রচুর বেড়ে যাবে। তাই একটু একটু করে কাজ করতে হচ্ছে।
কর্মীদের নিজেদেরও প্রাণের ঝুঁকি আছে। অনেকেই দায়ী করছেন শহর ও অন্যান্য জায়গার তারের বিশাল জটকে। এত পরিমাণে তারের জঙ্গল চারিদিকে থাকলে দুর্ঘটনার পরিমাণ এমনিই কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। তার ওপর এই দুর্যোগ। মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের লাইন বসানোর পরিকল্পনা থাকলেও, নানা কারণে তা বাস্তয়ায়িত হয়নি। কিন্তু এখন এসব আলোচনার সময় নয়। সরকারি বেসরকারি সমস্ত জায়গা থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে। একটু একটু করে বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে। একটু সময় লাগবে বটে, কিন্তু সবরকম ভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকেই বেঁচে থাকার মন্ত্র খোঁজার চেষ্টা করছে দক্ষিণবঙ্গ। আঁধার কেটে, আলো ঠিক আসবেই…