নন্দনে ব্রাত্য ‘দুধপিঠের গাছ’; বড়ো মুখ না থাকাই কি নেপথ্য কারণ?

করোনার মরসুমে দুর্গাপূজার সেই চেনা ভিড়, রাতজাগায় ভাটা পড়েছে। কিন্তু ভিড় নেমেছে বাংলা সিনেমায়। পুজোর মুখেই বেশ কিছু বাংলা সিনেমা মুক্তি পেল প্রেক্ষাগৃহে। নিউ নর্মালের নিয়ম মেনেই চলছে সিনেমা দেখা। দর্শকরা পৌঁছে গেছেন কলকাতার চলচ্চিত্রের ‘নন্দন কানন’-এ, অর্থাৎ নন্দন প্রেক্ষাগৃহে। গত ২১ অক্টোবর মুক্তি পেয়েছে পরিচালক উজ্জ্বল বসু’র ‘দুধপিঠের গাছ’ও। রুপোলি পর্দায় অন্যরকম আবহ নিয়ে এলেও, নন্দনের মুখ দেখেনি সিনেমাটি। বাকি সিনেমাগুলি জায়গা পেলেও ব্রাত্য থেকে গেছে ‘দুধপিঠের গাছ’।

শুরু থেকেই খবরের শিরোনামে জায়গা পেয়েছে সিনেমাটি। কোনো বড়ো ব্যানার নেই, বড়ো স্টারকাস্ট নেই; আড়ংঘাটার সাধারণ গ্রামবাসীদের অর্থসাহায্যেই সিনেমাটি তৈরি করেছেন পরিচালক। দামিনী বেণী বসু, কৌশিক রায়, হর্ষিল দাসদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন ওই মানুষগুলোও। সব মিলিয়ে, একটা সুন্দর গল্প, সুন্দর আবহ তৈরি হয়েছে পর্দায়। যারা যারা সিনেমাটি দেখেছেন, প্রত্যেকেই এমনটাই বলছেন। এবং অবাকও হয়েছেন যখন শুনেছেন, নন্দনে এটি জায়গা পায়নি। 

নন্দনের ইতিহাস, ঐতিহ্য তো এমনটা বলে না। তাহলে কি বড়ো ব্যানার, বড়ো মুখ না থাকলে জায়গা হবে না? অন্য ধারার ছবিগুলো পিছিয়ে পড়বে? কেন এমনটা হচ্ছে? ‘দুধপিঠের গাছ’-এর পরিচালক উজ্জ্বল বসু প্রহরকে জানালেন, “নন্দনে জায়গা পেল না ছবিটা, তার জন্য একটা মন খারাপ তো থাকেই। নন্দন তৈরির একটা নিজস্ব ইতিহাস আছে। একটা নিজস্ব ধারা আছে। আর আমরা যারা সিনেমা তৈরি করতে আসছি, স্বপ্ন দেখছি, তাঁদের কাছে তো এই জায়গাটির গুরুত্ব অন্যরকম। ‘দুধপিঠের গাছ’ মুক্তির আগেও আমরা গিয়েছিলাম নন্দন কর্তৃপক্ষের কাছে। যাবতীয় নিয়ম মেনেই অ্যাপ্লিকেশন করেছিলাম। প্রায় নিশ্চিতই ছিলাম। সেখানে কেন তাঁরা এই ছবিটিকে উপযুক্ত মনে করলেন না, সেটা জানি না। ওঁদের পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে যোগাযোগও করা হয়নি।”

শুধু ঐতিহ্য নয়, আর্থিক কারণেও অনেকেই নন্দনে সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন। প্রথমত, অনেকটা জায়গা; দ্বিতীয়ত, অন্যান্য জায়গার থেকে টিকিটের মূল্য অনেক কম। সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যেই। সেখানে নন্দনে জায়গা না পাওয়া কি সেই মানুষগুলোকে বঞ্চিত করল? অনেকেই সিনেমাটি নিয়ে উৎসাহিত ছিলেন। বিশেষ করে আড়ংঘাটা গ্রামের ওই মানুষগুলোর কথাই বলছিলেন পরিচালক উজ্জ্বল বসু। “ওঁরা অনেকেই কলকাতায় এসে সিনেমা দেখতে চেয়েছিলেন; বিশেষ করে নন্দনে। এখন তো সেটা আর হচ্ছে না”, বলছিলেন পরিচালক… 

প্রায় একই কথা শোনা গেল সিনেমাটির সম্পাদক অনির্বাণ মাইতির গলায়ও। ‘দুধপিঠের গাছ’ ছাড়াও তিনি সামনে এনেছেন নতুন, স্বাধীন পরিচালকদের কথা, যারা একটু অন্যরকম ছবির আমেজ নিয়ে আসেন। “এর আগেও জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত একটি ছবির ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছিল। নন্দনে কোনো অজ্ঞাত কারণে জায়গা পায়নি সেই ছবিটি। পরে প্রশাসনিক তৎপরতায় জায়গা পায়। ‘দুধপিঠের গাছ’ কতটা দর্শকের কাছে পৌঁছবে, কতটা দেখবেন তাঁরা, সেটা তো সময়ই বলবে। তবে নন্দনের টিকিটের মূল্য কম বলে অনেকেই আসতে পারতেন। ঠিক কী কারণে সিনেমাটি আটকাল, সেটা এখনও জানা যায়নি।”

প্রহরের তরফ থেকে নন্দন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও, তাঁরা ফোন ধরেননি। দিনের শেষে সেই চিরন্তন বিতর্ক আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। বড়ো ব্যানার, বড়ো প্রযোজক, বড়ো মুখ না হলে কি একটি ভালো সিনেমা জায়গা পাবে না? নন্দনের ঐতিহ্যের সঙ্গে কোনো অংশে তো আলাদা নয় ‘দুধপিঠের গাছ’! তাহলে কি নতুন সিনেমা, ভালো সিনেমা কি এভাবেই নিজের জমি খোয়াবে? উত্তর নেই। উত্তর কবে আসবে, সেটাও কেউ জানে না…   

Powered by Froala Editor

More From Author See More