কাগজের পাখি পোড়ানো থেকে রঙিন অন্তর্বাস— বিশ্বজুড়ে যেভাবে স্বাগত জানানো হয় নতুন বছরকে

/৬

স্বাগত ২০২৪। হ্যাপি নিউ ইয়ার। সবার মোবাইলে এই একটি বার্তাই ফুটে উঠছে। ‘হ্যাপি’ শব্দটি বেশ জোর দিয়েই বলছি সবাই। ২০২৩-র সমস্ত কালো দিক দূরে সরিয়ে রেখে যাতে আনন্দে বাঁচতে পারি আমরা, তারই প্রার্থনা চলছে জোরকদমে। তবে এই প্রার্থনারও বিভিন্ন ধরণ রয়েছে। কেবল আতসবাজি পুড়িয়ে, আর গান-বাজনায় থেমে থাকে না ইংরেজি বর্ষবরণ। উৎসব উপলক্ষে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেখা যায় এমন কিছু প্রথা, যা হয়তো আমাদের কানে আসে না তেমন। অথচ সেসব বাদ দিয়ে বর্ষবরণের ইতিহাস বলা যায় না। এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক এরকমই কিছু দেশের বিশেষ রীতি—

/৬

ইকুয়েডর - দোল উৎসবের আগে ‘ন্যাড়াপোড়া’য় আমরা সবাই কমবেশি অংশ নিয়েছি। সমস্ত অশুভ জিনিস দূর করার প্রথা এটি। ঠিক এমনই রীতি দেখা যায় ইকুয়েডরেও। দোল নয়, খোদ বর্ষবরণেই এমনটা দেখা যায়। এই দেশের বাসিন্দারা কাগজ, খড়, কাপড় দিয়ে একটি কাকতাড়ুয়ার মতো মূর্তি তৈরি করেন। অনেক ক্ষেত্রে পাখির আদলও দেওয়া হয়। আর তারপরই আগুন দিয়ে দেওয়া হয়। এটাই তাঁদের বর্ষবরণের উৎসব। বিগত বছরের সমস্ত কালো ছায়া যাতে দূর হয়ে যায়, নতুন বছরে যেন আলোর মুখ দেখতে পায় সবাই— সেজন্যই এই প্রথা।

/৬

ইতালি - আপনি যদি ঘরের আসবাব জানলা দিয়ে ফেলে দেন, তাহলে বেশ বিপদেই পড়তে পারেন। যে কোনো সময়ই এমন কাণ্ডটি ঘটলে তিরস্কারও জুটতে পারে কপালে। কিন্তু বর্ষবরণের সময় ইতালিতে এই জিনিসটি করলে কেউ কিছুই বলবে না। হ্যাঁ, ইউরোপের এই দেশটিতে এইভাবেই স্বাগত জানানো হয় নতুন বছরকে। তবে ঘাবড়াবেন না; দামি, ভালো আসবাব ফেলা হয় না। তুলনামূলক পুরনো এবং হালকা জিনিসই জানলা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় রাস্তায়। ঘরের সমস্ত দুঃখ, কষ্ট যাতে এইভাবেই দূর হয়ে যায়, তারই প্রার্থনা করেন ইতালীয়রা।

/৬

ডেনমার্ক - নববর্ষের দিন বাড়ির বাইরে বেরিয়ে কারোর বাড়ির দিকে প্লেট ছুঁড়লে নির্ঘাত অন্যকিছু ভাববেন তাঁরা। আর প্লেট ভাঙবেনই বা কেন! কিন্তু ইংরেজি নববর্ষের প্রাক মুহূর্তে যদি ডেনমার্কে থাকেন, তাহলে আপনি কারণটি বুঝতে পারবেন। এই দেশে বন্ধু বা পরিচিতের বাড়ির সামনে পুরনো প্লেট ভাঙাই ‘পুণ্য রীতি’। যত বেশি প্লেট ভাঙবেন, ততই ভাগ্য আপনার সহায় হবে। শোনা যায়, গ্রিসেও নাকি এই প্লেট ভাঙার উৎসব বেশ জনপ্রিয়। তবে একে কেন্দ্র করে বর্ষবরণের দিন ডেনমার্ক রীতিমতো উৎসবের মেজাজে মেতে ওঠে।

/৬

দক্ষিণ আমেরিকা - নববর্ষের সঙ্গে অন্তর্বাসের সম্পর্ক কোথায়? নিশ্চয়ই ভাবছেন, এমন উদ্ভট প্রশ্ন করার মানে কী! আর কোথাও হোক না হোক, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলিতে এই প্রশ্নের বিশেষ তাৎপর্য আছে। মেক্সিকো, ব্রাজিল, বলিভিয়ার মতো দেশগুলিতে নববর্ষের দিন রঙিন অন্তর্বাস পরাই রীতি! দীর্ঘদিন ধরে এই সংস্কার চলে আসছে সেখানে। অন্তর্বাসের রঙের সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে কাহিনি। কেউ যদি ভালোবাসা খুঁজতে চান, তবে লাল রঙের অন্তর্বাস পড়ুন। শান্তি চান? তাহলে বেছে নিন সাদা। এরকমই অদ্ভুত রীতি পালিত হয় ওখানে। বিশ্বাস, যে যেটা চাইবে, এই বছর তাঁকে ঠিক সেটাই দেবে।

/৬

ফিলিপিনস - বাড়ি ঢুকেই দেখলেন, চারিদিকে সাজিয়ে রাখা হয়েছে অজস্র জিনিস। কিন্তু সবগুলোর মধ্যেই একটা বিশেষত্ব আছে। প্রত্যেকটি জিনিসই গোলাকার! এমনই অদ্ভুত সাজ দেখা যাবে ফিলিপিনসে। এই দেশের মানুষরা মনে করেন, চারিদিকে গোল গোল জিনিস থাকলেই ভাগ্য সহায় হবে। ঘরে অর্থ আসবে, খ্যাতি আসবে, সমৃদ্ধিও। কয়েন, আঙুল, বল— যা থাকে তাই দিয়েই একটা অদ্ভুত পরিবেশ তৈরি করেন ফিলিপিনসের বাসিন্দারা। ঘরে ঢুকলে অবাক লাগবেই আপনার। হয়তো আসতে পারে সৌভাগ্যও…

পৃথিবী ঘুরলে এরকম আরও বহু প্রথা আমাদের সামনে হাজির হবে। স্রেফ নতুন বছরকে নিয়েই এত রকম আচার, তাহলে বৃহত্তর ছবিটা কেমন হবে! এমনই আশ্চর্যের ভাণ্ডার রয়েছে আমাদের এই নীল রঙের গ্রহে। আপাতত, নতুন বছরের আলো সবার ঘরে ছড়িয়ে যাক। 

Powered by Froala Editor