অপেক্ষার অবসান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে গেল ব্রিটেন

২০২০-র জানুয়ারির শেষের দিন। তখনও গোটা বিশ্বে জাঁকিয়ে বসেনি করোনা ভাইরাস। তার মধ্যেই নতুন খবর ভেসে এল বিশ্ব রাজনীতিতে। দীর্ঘদিনের টালবাহানার পর ওই বছরেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ভেঙে স্বতন্ত্র হল ব্রিটেন। পৃথিবী সাক্ষী থাকল ‘ব্রেক্সিট’-এর, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

২০২০ বিদায় নিয়েছে। এসে গেছে আরও একটি নতুন বছর— ২০২১। আবারও একটি ডিসেম্বর। এবং আবারও, খবরের শিরোনামে চলে এল ব্রেক্সিট। ২০২০-তে বলা হয়েছিল, এখনই ইইউ থেকে বেরোতে পারবে না ব্রিটেন। নিয়ন্ত্রণ কমে এলেও, এগারো মাসের ট্রানজিশন পিরিয়ডে থাকতে হবে তাকে। তারপর পুরোপুরি মুক্ত হবে তারা। নতুন বছরের শুরুতেই শেষ হল সেই ট্রানজিশন পিরিয়ড। আনুষ্ঠানিকভাবে ইইউ থেকে মুক্ত হল ব্রিটেন। 

১৯৭৩ সালে ইউরোপীয় ইকোনমিক কমিউনিটিতে যোগ দেয় ব্রিটেন। এই সংগঠনই পরবর্তীকালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ নামে পরিচিতি পায়। ইউরোপের মোট ২৮টি দেশ একসঙ্গে হয়ে এই সংগঠন তৈরি করেন। এই দেশগুলির ভেতরে নিজস্ব বাণিজ্য চলত, বাসিন্দারাও বিনা বাধায় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যেতেন। ৪০ বছরের এই সম্পর্ক হঠাৎই নড়বড়ে হয়ে গেল ২০১৬ সালে। ব্রিটেনের ভেতরে ইইউ ছাড়ার আওয়াজ ক্রমশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। এমন পরিস্থিতিতে আয়োজিত হল গণভোট। আর তাতে দেখা গেল, শতাংশের হিসেবে ব্রিটেনের বেশিরভাগ মানুষই চাইছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যেতে। তাহলে কি বহুদিন ধরেই আওয়াজটা তৈরি হচ্ছিল?

বিশ্বের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটেন যাতে স্বতন্ত্রভাবে চলতে পারে, নিজের স্বাধীন উপস্থিতি দেখাতে পারে, সেইজন্যই ব্রেক্সিট নিয়ে এত উন্মাদনা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে বিরোধী বক্তব্যও ছিল। তবে সেসব সরিয়ে, দীর্ঘ কয়েক বছরের বিস্তর টানাপোড়েনের পর ইইউ ছাড়ার জায়গায় পৌঁছয় ব্রিটেন। মাঝের ১১ মাস ট্রানজিশন পিরিয়ডে থাকার সময় বেশ কিছু চুক্তির সম্মুখীনও হয় ব্রিটেন ও ইইউ। শেষমেশ সব কিছু কার্যকর হয়েছে। ভ্রমণ, বাণিজ্য, অভিবাসন ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত দিকগুলি নিয়ে একে অপরের সমঝোতা হয়েছে। ব্রিটেনের পাসপোর্টও ফিরে আসবে সেই পুরনো নীল রঙে। সব মিলিয়ে নতুন বছরে এক নতুন পথ চলা শুরু হল ব্রিটেনে। সেই পথ আদৌ সুখকর কিনা, তা বোঝা যাবে ভবিষ্যতে… 

Powered by Froala Editor