ছায়াপথে ‘নৃত্যরত’ নক্ষত্রের হদিশ, আরও একবার প্রমাণিত আইনস্টাইনের তত্ত্ব

ফিজিক্সের আলোচনা শুরু হবে, আর আইনস্টাইন থাকবেন না, তা কি হয় কখনও! এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের যাবতীয় রহস্য সমাধানের কার্যকলাপ চলত তাঁর মাথায়। সেখান থেকেই উঠে আসত নানা রকম সূত্র, চিত্র। সম্প্রতি মহাকাশবিজ্ঞানীদের র্যা ডারে ধরা দিয়েছে একটি বিশেষ ঘটনা। একটি ব্ল্যাক হোলের বাইরে প্রদক্ষিণ করছে একটি আস্ত নক্ষত্র! কিন্তু সেটাও হচ্ছে অদ্ভুতভাবে। ঠিক যে নিয়মে, যে আকারে কক্ষপথটি রয়েছে, ঠিক সেটাই মনে করিয়ে দেয় আইনস্টাইনের একটি গবেষণার কথা। আরও একবার যা দেখে চমকে গিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

ঘটনাটা একটু সবিস্তারে বলা যাক। ইউরোপীয়ান সাদার্ন অবজারভেটরি-র মহাকাশবিজ্ঞানীদের নজরে আসে একটি অদ্ভুত জিনিস। চিলির আটাকামা মরুভূমিতে রাখা টেলিস্কোপের সাহায্যে নিজেদের গবেষণা চালিয়ে যান তাঁরা। কিন্তু কী ছিল এমন? ‘অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’ জার্নালে প্রকাশিত এই রিপোর্ট অনুযায়ী, আমাদের গ্যালাক্সি ‘মিল্কি ওয়ে’রই কেন্দ্রে রয়েছে একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল। তাকেই চক্কর কাটছে ‘এস-২’ নামের একটি নক্ষত্র। ব্ল্যাক হোলের বিপুল মাধ্যাকর্ষণ বলের জন্যই এমনটা হচ্ছে। কিন্তু আসল ব্যাপারটা অন্য। আমরা দেখেছি, সূর্যের চারিদিকে অন্যান্য গ্রহরা যখন পাক খায়, তখন কক্ষপথের আকৃতি হয় ইলিপ্টিকাল; মানে ডিম্বাকার। সেটা কেন হয়, তার যুক্তিও আছে। কিন্তু এখানে বিজ্ঞানীরা দেখলেন সম্পূর্ণ অন্য চিত্র। ওই ‘এস-২’ তারাটি ব্ল্যাক হোলটিকে প্রদক্ষিণ করছে বটে; কিন্তু সেটা ইলিপ্টিকাল নয়। কীরকম যেন নেচে নেচে হচ্ছে ব্যাপারটা। যেন ফুলের মতো আকার নিচ্ছে কক্ষপথটি।

এখানেই বিজ্ঞানীরা চোখ ফিরিয়েছেন আইনস্টাইনের দিকে। ‘আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্ব’-এর মাধ্যমে এই ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন তিনি। শুধু স্পেস বা স্থান নয়, সময়ও তাঁর তত্ত্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর ব্ল্যাক হোলের মতো এমন সুপারম্যাসিভ বস্তু থাকলে, স্পেস-টাইম দুটোরই মারাত্মক হেরফের ঘটে। গোটা ফোর-ডাইমেনশন জ্যামিতিটাও বদলে যায়। আর তার কারণেই ‘এস-২’-এর কক্ষপথের এমন আকৃতি। এর আগে ব্ল্যাক হোলের আকৃতি নিয়েও যে কথা বলে গিয়েছিলেন আইনস্টাইন, তা মিলে গিয়েছিল। আপাতত, এস-২ এবং তার সাম্প্রতিক চরিত্র নিয়ে গবেষণায় মগ্ন বিজ্ঞানীরা। আরও কী কী নতুন তথ্য উঠে আসে মহাকাশ থেকে, সেটারই অপেক্ষায় পদার্থবিদ্যার জগত।