একসঙ্গে কাটিয়েছেন ৭০ বছর, মৃত্যুর সময়েও পরস্পরের হাত ছাড়েননি এই দম্পতি

এ যেন ঠিক রূপকথার গল্প। স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে কাটালেন জীবনের ৭০টি বসন্ত। সুখে, দুঃখে, আনন্দে, ভালবাসায় পরস্পরের আশ্রয় হয়ে উঠেছিলেন তাঁরা। পরিপূরক হয়ে উঠেছিলেন। এতটাই যে, মৃত্যুও তাঁদের আলাদা করতে পারল না। একইসঙ্গে শুরু করেছিলেন যে পথ চলা, শেষও করেছেন একই সঙ্গে। একে অন্যের হাত ধরে রওনা হয়েছেন আরও এক গন্তব্যের দিকে।

নিয়মিত না হলেও, মাঝেমধ্যেই শোনা যায় এমন কাহিনি। আমাদের সামনে সেটা রূপকথা হয়ে আসে। তবে সেই রূপকথা দশ মাস আগে ঘটলেও, প্ল্যাটেল পরিবারের কাছে আজও তা ভীষণভাবে সত্যি। অস্ট্রেলিয়ার ফ্রান্সিস আরনেস্ট প্ল্যাটেল এবং নরমা জুন প্ল্যাটেল একসঙ্গে কাটিয়েছিলেন দীর্ঘ ৭০ বছর। বিবাহিত জীবন। দুজনেরই বয়স ৯০ অতিক্রম করেছিল। কিন্তু শরীর অনেকদিন ধরেই সঙ্গ দিচ্ছিল না। নরমা প্ল্যাটেল বেশ অনেকদিন ধরেই স্মৃতিভ্রষ্ট; ফ্রান্সিসও ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়ছিলেন। শারীরিক কারণও যেমন ছিল, তেমনই ছিল মনকষ্ট। কোমর ভেঙে যাওয়ার পর অসুস্থ ফ্রান্সিসকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন তাঁদের মেয়ে। হাসপাতালে অসুস্থ নরমা’র পাশেই শুয়েছিলেন তিনি। এদিকে শেষের সময় যে আস্তে আস্তে ঘনিয়ে আসছে, বুঝতে পারছিলেন না কেউ।

এইরকমই একদিন নরমা’র প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অদ্ভুতভাবে, নরমা’র শারীরিক অবস্থার অবনতির কিছু মুহূর্ত পরেই অস্থির হয়ে পড়েন ফ্রান্সিস প্ল্যাটেল। ছটফটানি গ্রাস করে দুজনকেই। তাঁদের দায়িত্বে থাকা নার্স পরীক্ষা নিরীক্ষা সেরে মাত্র ১০ মিনিট অন্যত্র গিয়েছিলেন। যতক্ষণে ফিরে এলেন, ততক্ষণে সব শেষ হয়ে গেছে। নার্স দেখলেন, একইসঙ্গে মৃত্যুবরণ করেছেন ফ্রান্সিস এবং নরমা প্ল্যাটেল। এবং আশ্চর্য, মৃত্যুর সময়ও তাঁরা পরস্পরকে ছেড়ে যেতে পারেননি। একে অন্যের দিকে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন হাত। সেই হাত ধরেই, অনন্তের দিকে যাত্রা এই দম্পতির।

আজকালকার জেন ওয়াইদের কাছে প্রেমের সংজ্ঞা নাকি বদলেছে। এইসব চিরন্তন, সাত জন্মের সম্পর্কে তাঁরা নাকি আজকাল বিশ্বাস রাখছে না। সবথেকে বড় কথা, এই হিংসা, হানাহানির পৃথিবীতে ‘প্রেম’ শব্দটাই যেন হাঁসফাঁস করছে। প্ল্যাটেল দম্পতির গল্প শুনে কি সেই কথা মনে হয় একবারও? তাঁদের এই গল্প অবশ্য বেশ কয়েক মাস আগের। খানিক চর্চিতও বটে। কিন্তু, ভালবাসাকে কি কখনও সময় দিয়ে বাঁধা যায়? সে যতই বেশ কিছু সময় আগে হোক, ঠিক ফিরে চলে আসে আমাদের মধ্যে। পৃথিবীতে আজও রূপকথা আসে, রূপকথা হয়। শুধু তাকে একটু ছুঁয়ে দেখতে হবে। অনুভব করতে হবে।