পদবির সঙ্গে অপশব্দ ‘চুতিয়া’র মিল, চাকরির আবেদনে নাকাল অসমের তরুণী!

পৃথিবীর সব দেশেই যখন জাতিবৈষম্য নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তখন সেই বিষয়টাকে একটু গভীরে গিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। দেখতে হবে, আমাদের ভাষার মধ্যেই কীভাবে ঢুকে পড়েছে একটা বিভেদের মানসিকতা। তথাকথিত নিচু সম্প্রদায়ের মানুষরা তো অবজ্ঞার পাত্র ছিলেন, সেইসঙ্গে পুরো জনজাতিকেই অপমান করেছে উচ্চবর্ণের ভাষা এবং অপভাষা। আর এই মানসিকতার এক জ্বলন্ত উদাহরণ আসামের এই তরুণী।

সমের গোগামুখ শহরের বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা সুতিয়া সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটি অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। সেখানে তিনি জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা ন্যাশনাল সিড কর্পোরেশন লিমিটেডের বিজ্ঞাপন দেখে চাকরির জন্য মনোয়ন জমা দিতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু অনলাইন পোর্টালে বারবার চেষ্টা করার পরেও তাঁর আবেদন মঞ্জুর করা হয় না। কারণ কী? কারণ তাঁর পদবি। যে শব্দটির ইংরেজি বানানের সঙ্গে হুবহু মিলে যায় একটি হিন্দি অপশব্দ। শুধু হিন্দি নয়, ভারতের অনেক ভাষাতেই এটি অপশব্দ হিসাবে চিহ্নিত। কিন্তু সুতিয়া আসামের একটি বহু প্রাচীন জনগোষ্ঠী। জঙ্গলের মধ্যে তাঁরা যখন বাস করতেন, তখন এই আর্য ভাষা গোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে হয়তো যোগাযোগই হয়নি। তবুও কীভাবে যেন একটা বিদ্বেষের বীজ বাসা বেঁধেছে ভাষার মধ্যে।

অবশ্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বিষয়টি জানতে তাঁরা দ্রুত সমস্যার সমাধান করেন এবং প্রিয়াঙ্কার মনোনয়ন নথিভুক্ত হয়। কিন্তু যে বৈষম্যের স্বীকার হতে হয় এইসব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষদের, সেটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কিছু বছর আগে ফেসবুকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ এনেছিল অল আসাম সুতিয়া স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। অভিযোগে বলা হয়েছিল, কয়েক হাজার মানুষের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হয়েছে। সেবারেও আসলে হিন্দি অপভাষার সঙ্গে এই পদবীকে গুলিয়েছিল ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। আর এবারে একই ঘটনার শিকার কৃষিবিদ্যায় মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে চাকরিপ্রার্থী প্রিয়াঙ্কা সুতিয়া। নিরবিচ্ছিন্ন ঘটে চলা এই বৈষম্যকে নির্মূল করতে তাই আমাদের ভাষার প্রয়োগের দিকেও সচেতন হতেই হবে। কোনো ভাষাই আরেক জনগোষ্ঠীর মানুষকে অপমান করতে পারে না।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে লড়াই মধ্যপ্রদেশের দুই তরুণীর, পেয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বীকৃতিও