ছেলেবেলার ‘জিনিয়াস’ পার্লে-জি যেন হারিয়ে না যায়, প্লিজ!

আমাদের প্রত্যেকেরই ছেলেবেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই বিস্কুট। নস্টালজিয়াও বলা যায়। শুধু ছেলেবেলাই কেন, এখনও কি অফিসফেরতা কোনো মধ্যবিত্ত বা টিফিনটাইমে স্কুলপড়ুয়ার ব্যাগ থেকে উঁকি দেয় না পার্লে জি-র ছোট্ট প্যাকেট? পাঁচ টাকায় এমন ভালো বিস্কুট আর কে দেবে এখনও?

‘পার্লে-জি – জি ফর জিনিয়াস’

১৯২৯ সালে মুম্বাই-এর উপকণ্ঠে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পার্লে প্রোডাক্টস-এর কারখানা। ১৯৩৯ থেকে বিস্কুট তৈরি করতে শুরু করে কম্পানিটি। স্বাধীনতার পর, ব্রিটিশ-ব্র্যান্ডের বিস্কুটটির বিকল্প হিসেবে উঠে আসে পার্লের গ্লুকোজ বিস্কুট। চূড়ান্ত জনপ্রিয়তা পায় পার্লে গ্লুকো।

দীর্ঘদিন পার্লে গ্লুকো নামটিই প্রচলিত ছিল। আশির দশকে ব্র্যান্ডটির নাম বদলে হয় ‘পার্লে-জি।’ আর সেই সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে ট্যাগলাইন – ‘জি ফর জিনিয়াস’। কী, ছেলেবেলা মনে পড়ে যাচ্ছে এই ট্যাগলাইন শুনে? হ্যাঁ, এভাবেই প্রবাদে পরিণত হয়েছে ‘পার্লে-জি – জি ফর জিনিয়াস’। আমি আপনি ও আমাদের মতো আরও হাজার ভারতীয় বড় হয়েছে এই কথাটা শুনে।

দশকের পর দশক ধরে দূর থেকে হলুদরঙা প্যাকেট দেখলেই চিনতে পারা যায় পার্লে জি-কে। ২০০৩ সালে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বিস্কুট ব্র্যান্ডের শিরোপাও পায় পার্লে-জি। ততদিনে জনপ্রিয়তার শিখরে এই বিস্কুট।

কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দার জেরে আমাদের প্রিয় এই বিস্কুটই চরম সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে। সম্প্রতি পার্লের ক্যাটাগরি হেড ময়াঙ্ক শাহ জানিয়েছেন, পার্লের চাহিদা পড়ে গেছে খুব দ্রুত। বিক্রির হাল খুবই খারাপ। এমন পরিস্থিতিতে, পার্লে হয়তো উৎপাদন কমিয়ে দেবে। আর এর জন্য কাজ হারাতে পারেন ৮ থেকে ১০ হাজার কর্মী।

অদূর ভবিষ্যতে, ব্যবসায়িক মন্দার জেরে বন্ধ হয়ে যাবে না তো পার্লে-জি?

ময়াঙ্ক জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে জিএসটি লাগু হওয়ার পর থেকেই কমতে থাকে পার্লে জি-র জনপ্রিয়তা। কারণ, পাঁচ টাকার বিস্কুটের প্যাকেটের ওপরে বসানো হয় জিএসটি ট্যাক্স। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সংস্থাটি প্যাকেটের মধ্যে বিস্কুটের সংখ্যা কমিতে দিতে বাধ্য হয়েছে। আর এতেই মার খেয়েছে গ্রামাঞ্চলে বিক্রি। পার্লে জি-র লাভের অর্ধেকের বেশি আসত ভারতের গ্রাম থেকেই। আর, পরিচিত প্যাকেটে বিস্কুটের সংখ্যা কমে যাওয়ায়, মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন ক্রেতারা। ময়াঙ্ক বলেন, জিএসটির হার না কমালে বর্তমান পরিস্থিতিতে কর্মী ছাঁটাই ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকবে না।

আর এই খবরেই মনের মধ্যে উঁকি দেয় একটা ভয়। অদূর ভবিষ্যতে, ব্যবসায়িক মন্দার জেরে বন্ধ হয়ে যাবে না তো পার্লে-জি? বর্তমান পরিস্থিতি কি সেই দিকেই ইঙ্গিত করছে? সরকার কি কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না?

নতুন-নতুন হাজারো ব্র্যান্ডের বিস্কুট আসছে বাজারে। কিন্তু যে রাজা, তাকে কি এভাবে ভেঙে পড়তে দেখলে ভালো লাগে, বলুন?