শুধু বাংলাই নয়, একাধিক হিন্দি সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন ছবি বিশ্বাস

১৯৫৬ সাল। মুক্তি পেল রাজ কাপুরের সুপারহিট সিনেমা 'জাগতে রহো'। মুক্তির সঙ্গে সঙ্গেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে সেই সিনেমা। জনপ্রিয় হয়েছিল সিনেমার কাহিনিও। সেই কাহিনির অনুকরণে অনেক আঞ্চলিক ভাষাতেই সিনেমা তৈরি হল। হল বাংলাতেও। নাম 'একদিন রাত্রে'। সিনেমার মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করলেন ছবি বিশ্বাস। প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রাজ কাপুর নিজেও। একের পর এক দৃশ্যে ছবি বিশ্বাসের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। অবশেষে মান্না দের কণ্ঠে 'এই দুনিয়ায় ভাই সবই হয়' গানের চিত্রায়ণে নিজের উচ্ছ্বাস আর ধরে রাখতে পারলেন না। সেদিন প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরিয়ে রাজ কাপুর বলেছিলেন, ভারতীয় সিনেমার সর্বকালের শ্রেষ্ঠ অভিনেতার নাম ছবি বিশ্বাস। শোনা যায়, বলিউড তাঁকে সেভাবে পায়নি বলে আক্ষেপও করেছিলেন তিনি।

ছবি বিশ্বাস, বাংলা সিনেমার জগতে একটি যুগের নাম। জনপ্রিয় ঘরোয়া সিনেমা থেকে সত্যজিৎ রায়ের মতো পরিচালকের ক্যামেরায় সমান তালে অভিনয় করে গিয়েছেন। কখনও ক্লান্ত হননি। মাত্র ২২ বছরের কর্মজীবনে ২৫০টির বেশি সিনেমায় তাঁকে পেয়েছে বাঙালি দর্শক। তবে বলিউড তাঁর ছোঁয়া একদমই পায়নি, এই কথাটা একটু ভুল হবে।

মঞ্চের অভিনয় ছেড়ে ছবি বিশ্বাস প্রথম পর্দায় আত্মপ্রকাশ করলেন কিন্তু একটি হিন্দি ছবিতেই। সেটা ১৯৪০ সাল। ভারতের সংস্কৃতি জগতের সমস্ত ক্ষেত্রেই তখন বাঙালিদের দাপট। আর বলিউডে একের পর এক সিনেমায় নিজের কৃতিত্ব দেখাচ্ছেন পরিচালক দেবকী বসু। তাঁর 'নর্তকী' সিনেমাতেই প্রথম পর্দায় দেখা গেল ছবি বিশ্বাসকে। আর একবারেই দর্শকদের মন জয় করে নিলেন। ছবি বিশ্বাসের বয়স তখন ৪০। আর তাঁর চরিত্রটি এক বৃদ্ধ সন্ন্যাসীর। অথচ কে বলবে, অভিনেতা আর চরিত্রের বয়সের এমন বিস্তর ফারাক!

পরের বছরই সিনেমাটির বাংলা ভার্সন মুক্তি পায়। বাংলা সিনেমার দর্শক আর ছবি বিশ্বাসকে ছাড়েননি। ছবি বিশ্বাসও ছেড়ে যাননি তাঁর দর্শকদের। তবে এর মধ্যেই আরও তিনটি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। ১৯৪২ সালে মুক্তি পেল 'সৌগন্ধ'। পরিচালক হেমচন্দ্র চন্দর। এই সিনেমাতেও একঝাঁক বাঙালি শিল্পী। তুলসী চক্রবর্তী, জহর গাঙ্গুলি, ভারতী দেবী। আর সেইসঙ্গে হিন্দি সিনেমার পর্দায় আবারও ছবি বিশ্বাস। সেবছর মুক্তি পেল নীরেন লাহিড়ী পরিচালিত ইতিহাস নির্ভর সিনেমা 'মহাকবি কালিদাস'। সিনেমার একটি ছোটো চরিত্রে উপস্থিত ছিলেন ছবি বিশ্বাস।

আরও পড়ুন
নির্বাক যুগেও একটি সিনেমার আয় সাত লক্ষ টাকা, নেপথ্যে হাওড়ার জ্যোতিষচন্দ্র

১৯৪৭ সাল, অর্থাৎ স্বাধীনতার বছর। স্বাধীনতার মুহূর্তে দেশে ইংরেজ শাসনের শুরুর অধ্যায় তুলে ধরতে চাইলেন পরিচালক দেবকী বসু। সিনেমার নাম 'চন্দ্রশেখর'। সাত বছর আগে দেবকী বসুর সিনেমাতেই আত্মপ্রকাশ করেছিলেন ছবি বিশ্বাস। এবারেও চন্দ্রশেখরের চরিত্রে দেখা গেল ছবি বিশ্বাসকেই। তবে হিন্দি সিনেমা সেই শেষ। তারপর আর বলিউডের দিকে যাননি। ১৯৬২ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত বাংলা সিনেমার পর্দাতেই অভিনয় করে গিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন
কবিতা থেকে সিনেমা - সর্বত্রই নতুন ভাষা খুঁজেছেন বুদ্ধদেব

এই দুই দশকের মধ্যেই সিনেমার আঙ্গিক অনেক বদলে গিয়েছিল। পর্দায় এসে গিয়েছেন বাঙালির প্রিয় মহানায়ক উত্তম কুমার। কিন্তু ছবি বিশ্বাসের জনপ্রিয়তা তাতে একচুল কমেনি। বাংলা সিনেমার মুকুটহীন সম্রাট হয়েই বিদায় নিয়েছেন ছবি বিশ্বাস। সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে করেছেন তিনটি পূর্ণ সিনেমা। কিংবদন্তি পরিচালক নিজেও স্বীকার করেছেন, ছবি বিশ্বাসের মতো জাত অভিনেতা তিনি খুব কম দেখেছেন। আর তেমনই ছিল অহংকার। যেন জলসাঘরের বিশ্বম্ভর রায় চরিত্রটা তাঁকে উদ্দেশ্য করেই তৈরি। হবে নাই বা কেন! একের পর এক সিনেমায় মানুষের ভালোবাসাও তো কম পাননি। কিন্তু তাঁর অভিনীত হিন্দি সিনেমাগুলির কথা আর কজনই বা মনে রেখেছেন?

আরও পড়ুন
সিনেমা নির্মাণের শেষে মৃত্যু নায়কের, হত্যা-মামলায় অভিযুক্ত প্রযোজক!

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More