ইস্টার সানডে-পাসওভার মিলেমিশে একাকার, বসন্তের ধর্ম-উদযাপন আজ

উৎসবের দিন এক। তার রীতিনীতিও প্রায় একই। শুধু দুই ধর্মমতের বিশ্বাস আলাদা। কেউ মনে করেন ক্রুশবিদ্ধ যিশু সেদিন আবার ফিরে এসেছিলেন শিষ্যদের কাছে। আবার কেউ মনে করেন সিনাই মরুভূমি পেরিয়ে তাঁদের নতুন যাত্রাপথ শুরু হয়েছিল এই দিনেই। বাইবেলের দুটি টেস্টামেন্টে আছে দুরকম কাহিনি। ইহুদিদের কাছে উৎসবের নাম ‘পাসওভার’। আর খ্রিস্টানদের কাছে ইস্টার। দুই ধর্মের কাছেই বছরের সবচেয়ে বড়ো উৎসব। আজই সেই উৎসব পালিত হল সারা পৃথিবী জুড়ে।

ওল্ড টেস্টামেন্ট অনুযায়ী প্রাচীন ইজিপ্সীয় সভ্যতায় বন্দি দাস হিসাবে ছিলেন ইজরায়েলের অধিবাসীরা। সেখান থেকে তাঁদের মুক্তি পাওয়ার ঘটনাই এক্সোডাস। এই যাত্রা শুরুর কাহিনিকে মনে রাখতেই পালিত হয় ‘পাসওভার’। বাইবেলের বর্ণনায় জানা যায়, মোজেসের নেতৃত্বে একজন দাস প্রভুকে হত্যা করে পালিয়ে যান ইহুদিরা। কিন্তু ফ্যারাওয়ের বাহিনী তাঁদের পিছনে ধাওয়া করে যায়। যখন প্রায় ধরা পড়ে যাওয়ার অবস্থা, তখনই ঘটল এক অদ্ভুত কান্ড। ঈশ্বরের ইচ্ছায় লোহিত সাগরের জল সরে গেল দুদিকে। মাঝখানের দুর্গম পথ দিয়ে ৪০ দিন ধরে চলল যাত্রা। অবশেষে তাঁরা পৌঁছলেন ইজরায়েলে।

আবার নিউ টেস্টামেন্টের কাহিনি জানায় যিশুর ফিরে আসার কথা। নিজেকে ইশ্বরের সন্তান বলে দাবি করায় তাঁর মৃত্যুদণ্ড দেয় রোমান শাসকরা। ইস্টারের দুদিন আগে, শুক্রবার ক্রুশবিদ্ধ করা হয় যিশুকে। কিন্তু ঠিক দুদিনের মধ্যেই আবারও যিশুর দেখা পেলেন তাঁর শিষ্যরা। চারজন শিষ্যের গসপেলেই সেই কাহিনি জানা যায়। এই ফিরে আসাই প্রমাণ করে তিনি যথার্থই ইশ্বরের সন্তান ছিলেন। এখানেও দেখা যায় পরবর্তী ৪০ দিন ধরে রোমান আধিপত্য থেকে মুক্তির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন খ্রিস্টানরা।

রবিবার ফিরে এসেছিলেন যিশু। তাই বছরের সব রবিবারই খ্রিস্টানদের কাছে পবিত্র দিন। ইস্টারের গুরুত্ব যদিও সবার থেকে আলাদা। ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠান তো আছেই। সেইসঙ্গে কচিকাচারা মেতে  ওঠেন ইস্টার এগ খুঁজে বের করারর খেলায়। কোথাও কোথাও আবার বিশেষ পোশাকে কেউ বাচ্চাদের মধ্যে বিতরণ করেন ইস্টার বানি। সব মিলিয়ে এক হইহই ব্যাপার। কিন্তু তার মধ্যেই চলে সীমিত আহার এমনকি উপবাসও। এ আসলে এক লড়াইয়ের প্রস্তুতি।

তবে অনেকেই ইস্টারের উৎপত্তির পিছনে প্রাচীন পেগান ধর্মের ছায়া দেখতে পান। ইঙ্গ-স্যাক্সন দেবি ইস্ট্রার নাম থেকেও ইস্টার উৎসবের উৎপত্তি বলে মনে করেন কেউ কেউ। এই দুই রীতিতেই বসন্তের শেষের এই সময়টায় ফসলের দেবীর আরাধনা করা হয়। একই অনুষঙ্গ যেন পাওয়া যায় বাইবেলের লাস্ট সাপারের বর্ণনাতেও। যিশুর রক্ত আর মাংসকে মদ্য আর রুটিতে পরিণত করা তো আসলে খাদ্যসঞ্চয়।

ধর্মের বিভেদে উৎসবের বিষয় বদলে যায়। বদলায় প্রাসঙ্গিকতাও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই উৎসব তো শেষ বসন্তের উদযাপন। আর কিছুদিনের মধ্যেই গ্রীষ্মের খর দাবদাহ শুরু হবে। ঋতুচক্রের এমন উদযাপন ক্রমশ বদলে গিয়েছে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। অবশ্য সেই গল্পকথার সঙ্গেই টিকে গিয়েছে কিছুটা ইতিহাসও।

Powered by Froala Editor