‘নরকের কূপ-এ সাপের বাসা, জলপ্রপাত! আর কী দেখলেন ভূতাত্ত্বিকরা?

স্বর্গ আর নরক নিয়ে মানুষের কল্পনা তো কবে থেকেই চলেছে। কিন্তু যদি সত্যিই নরকে নেমে দেখা যায় জায়গাটা কেমন? কয়েকদিন আগে সত্যিই সত্যিই এমন কাণ্ড ঘটিয়ে বসেছেন ওমানের একদল ভূতাত্ত্বিক। হ্যাঁ, ওমান এবং ইয়েমেন সীমান্তের কাছে বিশাল আয়তনের যে গর্ত নরকের কূপ বা ‘ওয়েল অফ হেল’ (Well of Hell) নামে পরিচিত, সম্ভবত প্রথমবার সেখানে স্বেচ্ছায় নামলেন কোনো মানুষ। আর নেমে যে দৃশ্য তাঁরা দেখলেন, তা সত্যিই অবাক করা। মাটির নিচে বাসা বেঁধে রয়েছে একদল সাপ। শুধু তাই নয়, রয়েছে আস্ত জলপ্রপাতও।

ওমানের এই গর্তটি কতদিনের প্রাচীন, তা সঠিকভাবে আন্দাজ করা কঠিন। তবে ভূতাত্ত্বিকদের অনুমান, অন্তত ১০ লক্ষ বছরের পুরনো তো হবেই। অর্থাৎ মানুষ বরাবর সেখানে গর্তই দেখে আসছে। আর প্রায় ৯ মিটার ব্যাসের এই বিরাট গর্তটিকে দেখেই মানুষ নানারকম কল্পনা করেছে। স্থানীয় মানুষদের বিশ্বাস, অপরাধী এবং ঈশ্বরে অবিশ্বাসী মানুষদের এখানে টেনে নেন নরকের দেবতা। অনেকের মতে আবার, প্রাচীনকালে সত্যিই অত্যাচারী রাজারা এখানে মানুষদের ঠেলে ফেলে দিতেন। কেউ কেউ আবার বলেন, গর্তের কাছাকাছি গেলেই নাকি আর ফিরে আসা যায় না। এমনকি পাখিরাও সহজে এই গর্তের ধারেকাছে ঘেঁষে না।

তবে লোকশ্রুতি যাই হোক, বাস্তবে ভূপৃষ্ঠে হঠাৎ তৈরি হওয়া টানের কারণেই গর্তটি তৈরি হয়েছে বলে মত বিজ্ঞানীদের। কিন্তু এত বছর ধরে কেমন আছে সেই গর্ত? ভূতাত্ত্বিক মহম্মদ আল কিনডির নেতৃত্বাধীন গবেষক দলটি সরেজমিনে দেখে এলেন সেই দৃশ্য। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৯ মিটার নিচেই রয়েছে একটি মেঝে। আর সেখানেই প্রথম অবাক হয়েছিলেন তাঁরা। মাঝের উপর থরে থরে সাজানো খনিজ মুক্তো। খনিজ মুক্তো পৃথিবীতে সহজে মেলে না। খুবই নিরুপদ্রুত অঞ্চলে চুনাপাথর জমে, তার উপর ক্রমাগত জল পড়তে থাকলে তবেই গড়ে ওঠে খনিজ মুক্তো। কিন্তু এখানে জল এল কোত্থেকে? সেই উত্তর পাওয়া গেল আরও খানিকটা নামতেই। গর্তের দেয়াল ভেদ করে অসংখ্য গহ্বর থেকে নেমে আসছে জলের স্রোত। একসময় আরও খানিকটা উপরেও এমন জলপ্রপাত ছিল বলে অনুমান করছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু এই জলের উৎস এখনও জানা যায়নি। আর সবচেয়ে আশ্চর্য, ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬৫ মিটার নিচে দ্বিতীয় যে মেঝেটি পাওয়া গেল, তা একেবারেই নিশ্চুপ নয়। বরং সেখানে বাস করছে একঝাঁক বিষাক্ত সাপ। সঙ্গে ব্যাং এবং পোকামাকড় মিলিয়ে এক জটিল বাস্তুতন্ত্র। আশেপাশে শ্যাওলা ছাড়া কোনো উদ্ভিদ নেই। ফলে প্রতিটা প্রাণীই মাংসাশী। তবে কেউ আক্রমণ না করলে এরা কিছু করবে না। এমনটাই বিশ্বাস কিনডির।

প্রথমবারের অভিযানে এর থেকে বেশি নিচে নামা সম্ভব হয়নি। তবে পরে আবারও নামার পরিকল্পনা করছেন বিজ্ঞানীরা। আর এভাবেই ক্রমশ নরকের কূপের আসল সত্যি উঠে আসবে। তখন আর মানুষের মনের মধ্যে কোনো কুসংস্কারের জায়গা থাকবে না, সে-কথা বলাই বাহুল্য। আর সেটাই উদ্দেশ্য কিনডি এবং তাঁর সহকর্মীদের।

আরও পড়ুন
দেড় কিলোমিটার গুহাজুড়ে হাড়ের বিছানা! সাক্ষাৎ নরকের সন্ধান সৌদি আরবে

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
কী আছে পৃথিবীর পেটের ভিতর? গর্ত খুঁড়লেন বিজ্ঞানীরা, তারপর...