দামে সস্তা, সহজে মিশেও যায় প্রকৃতিতে – নতুন বায়োপ্লাস্টিক আবিষ্কার বাঙালি বিজ্ঞানীদের

বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে সারা পৃথিবীতে অন্যতম জ্বলন্ত সমস্যা হল প্লাস্টিক দূষণ (Plastic Pollution)। পরিসংখ্যান বলছে, এখনও পৃথিবীজুড়ে মাত্র ৯ শতাংশ প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করা হয়। বাকি আবর্জনার প্রায় পুরোটাই মেশে প্রকৃতিতে। দূষণ ঘটানোর পাশাপাশি নিকাশি ব্যবস্থাকেও বিকল করে দেয় প্লাস্টিক আবর্জনা। আর এই সমস্ত সমস্যার সমাধানে এবার পথ দেখাচ্ছেন একদল বাঙালি বিজ্ঞানী। কেবলমাত্র খাবারের অযোগ্য তেল এবং কৃষিজাত আবর্জনা দিয়েই তাঁরা তৈরি করে ফেলেছেন প্লাস্টিকের বিকল্প। আর প্রাথমিক পরীক্ষায় প্রমাণিত, এই বায়োপ্লাস্টিক (Bioplastic) বাজারচলতি পলিমারগুলির চেয়ে কার্যকারিতায় পিছিয়ে নেই একটুও।

বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের গবেষক অধ্যাপক সূর্যসারথী বসু এবং কৌশিক চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন এই গবেষণাদলে ছিলেন আরও তিনজন বাঙালি বিজ্ঞানী। তাঁরা হলেন ইন্দ্রনীল চক্রবর্তী, প্রীতিরঞ্জন মণ্ডল এবং শুভাশিস মাইতি। কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তর এবং একটি রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে গবেষণার কাজ শুরু হয় কয়েক বছর আগে। গবেষকদের উদ্দেশ্য ছিল এমন প্লাস্টিক তৈরি করা, যার বাজারদর অনেক কম হবে। পাশাপাশি সেই প্লাস্টিক সহজেই মিশে যাবে প্রকৃতির সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত উদ্ভিজ্জ তেল এবং কৃষিজাত আবর্জনা থেকেই মিলল উপাদান। প্রাথমিকভাবে রেড়ির তেল এবং ধান ও গমের খড় ও তুষ দিয়েই তৈরি করা হয়েছে প্লাস্টিক। তবে একই পদ্ধতিতে জ্যাথ্রোপা বা নিম তেল দিয়েও এই বায়ো-প্লাস্টিক তৈরি করা সম্ভব বলে মনে করছেন গবেষকরা।

প্লাস্টিক দূষণের পাশাপাশি বায়ুদূষণও বর্তমান সময়ে এক ভয়াবহ সমস্যা। আর কৃষিপ্রধান রাজ্যগুলিতে কৃষিক্ষেত্রের আবর্জনা পুড়িয়ে দেওয়ার প্রাচীন রীতি সেই সমস্যাকে আরও উস্কে দেয়। সেক্ষেত্রে প্লাস্টিক তৈরির কাজে এইসব আবর্জনা ব্যবহার করা গেলে অনেকটাই উপশম পাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি দেখা গিয়েছে, সাধারণ বায়ো-প্লাস্টিকের স্থায়িত্ব খুবই কম হয় এবং বেশি তাপ সহ্য করতে পারে না। কিন্তু এক্ষেত্রে সেলুলোজ এবং তেলের অনুপাত পরিবর্তন করেই নানারকম স্থায়িত্বের প্লাস্টিক তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। ফলে ক্যারিব্যাগ, প্লাস্টিক কভার থেকে শুরু করে থালা-বাটি-গ্লাস-কাপ সবই তৈরি করা সম্ভব হয়েছে এই প্রযুক্তিতে। দেখা গিয়েছে, সাধারণ প্লাস্টিকের কাপ-গ্লাস থেকে যেমন বিষক্রিয়া ছড়ায় এক্ষেত্রে তাও হচ্ছে না।

ইতিমধ্যে এই আবিষ্কারের জন্য পেটেন্টের আবেদনও জানিয়ে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহার্য সামগ্রী তৈরির পাশাপাশি চিকিৎসাব্যবস্থাতেও বায়ো-প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়িয়ে তুলতে আগ্রহী বিজ্ঞানীরা। আর এক্ষেত্রে খরচও একেবারে হাতের নাগালে। মাত্র ৪০-৫০ টাকায় এক কেজি বায়ো-প্লাস্টিক তৈরি সম্ভব। সব মিলিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন আবিষ্কার নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।

Powered by Froala Editor