দেশের সব হাইকোর্টেই রায়দান কমেছে ৫০ শতাংশ, সৌজন্যে করোনা

করোনা পরিস্থিতিতে মার্চ মাস থেকে শুরু হয়েছিল লকডাউন। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে অত্যন্ত জরুরি পরিষেবা ছাড়া প্রায় সবই বন্ধ। আবার জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রেও বিকল্প পথের অনুসন্ধান করা হয়েছে। ঠিক যেমন বিচারব্যবস্থাকে নিয়ে আসা হয়েছে অনলাইনে। প্রথমে সুপ্রিম কোর্ট এবং পরে তার দেখাদেখি দেশের সমস্ত আদালত বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছে অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্সে শুনানির মাধ্যমে। কিন্তু তাতেই কি সমস্যার সমাধান হয়েছে? পরিসংখ্যান বলছে এই সময়ের মধ্যে দেশের হাইকোর্টগুলিতে রায়দানের সংখ্যা কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। আর জেলা ও নগর আদালতের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা কোথাও কোথাও ৭০ শতাংশেরও বেশি।

এমনিতেই ভারতের বিচারব্যবস্থার শ্লথগতির জন্য সমালোচনা করেন অনেকেই। তার মধ্যে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক কর্তৃক প্রকাশিত ন্যাশানাল জুডিশিয়াল ডেটা গ্রিডে দেখা যাচ্ছে, বিগত বছরের তুলনায় করোনা পরিস্থিতিতে রায়দানের সংখ্যায় ব্যাপক হ্রাস ঘটেছে। গড়ে এই হার হাইকোর্টগুলির ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ এবং জেলা ও নগর আদালতের ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ। সুপ্রিম কোর্টের তথ্য অবশ্য তালিকায় প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু ‘সুপ্রিম কোর্ট অবজার্ভার’-এর এপ্রিল মাসের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী সেমাসের মোট রায়দানের সংখ্যাটা ৩৫৫টি। যেখানে ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে সংখ্যাটা ছিল ১০৫৮৬ এবং ১২০৮৪।

অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় দেখিয়েছেন, মহামারী পরিস্থিতিতেও দেশের সমস্ত হাইকোর্ট মিলিতভাবে ১২ লাখ মামলার রায়দান করেছে। তাঁর মতে, অন্যান্য বছরের সঙ্গে এই বছরের তুলনা করা একেবারেই অর্থহীন। যদিও অনেকে দাবি করেছেন, আদালতের রায়দান কমে যাওয়া মানে এক অর্থে দেশে আইনের শাসন দুর্বল হয়ে পড়া। মহামারী পরিস্থিতিতেও আইনের শাসন বজায় রাখার দায়িত্ব বিচারবিভাগেরই। হয়তো সেই কারণেই সম্প্রতি আবারও সমস্ত আদালতে শারীরিকভাবে উপস্থিত থেকে শুনানির প্রক্রিয়া চালু করার পথে এগোচ্ছে। অসমে এই মাসের শুরু থেকেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। অন্যান্য রাজ্যের আদালতেও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা পৌঁছে গিয়েছে। সেই নির্দেশিকা মেনে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন না করেও শারীরিক উপস্থিতির ভিত্তিতে শুনানি চলবে।

এখনও অনলাইন শুনানির উপরেই জোর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু দেশের এক বিরাট অংশের মানুষের পক্ষে অনলাইন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়। বিশেষভাবে তাঁদের কথা মাথায় রেখেই সমস্ত দেশে আইনের শাসন পৌঁছে দিতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে সুপ্রিম কোর্টের তরফে জানানো হয়েছে। আশা করা যায় এরপরে রায়দানের সংখ্যা কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পাবে।

আরও পড়ুন
১ টাকার জরিমানা, অন্যথায় ৩ মাসের জেল – প্রশান্তভূষণকে ‘শাস্তি’ সুপ্রিম কোর্টের

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
হিন্দুদের পারিবারিক সম্পত্তির সমান অংশীদার মেয়েরাও, যুগান্তকারী রায় সুপ্রিম কোর্টের