নয়া আবিষ্কারে ফের শিরোনামে বোস-আইনস্টাইন তত্ত্ব

কঠিন, তরল, গ্যাস এবং প্লাজমা— এই চারটি দশায় থাকতে পারে কোনো পদার্থ। প্রাথমিক স্তরের বিজ্ঞান এমনটাই শিখিয়েছে আমাদের। কিন্তু আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগে এক নতুন অবস্থার কথা শুনিয়েছিলেন এক বঙ্গসন্তান। শুধু জানাননি, বরং গাণিতিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন, পরম শূন্য তাপমাত্রায় কোনো পদার্থ গতিশক্তিহীন অণুরাশি আচরণ করে একটিমাত্র অণু হিসাবে। তিনি সত্যেন্দ্রনাথ বসু (Satyendra Nath Bose)। অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের (Einstein) সঙ্গে যৌথভাবে তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন পদার্থের পঞ্চম দশার (Fifth State)। যা আজ পরিচিত বিইসি বা বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট (Bose-Einstein Condensate) হিসাবে। 

তবে ল্যাবরেটরিতে পরম শূন্য উষ্ণতা তৈরি করা এককথায় প্রায় অসম্ভব। ৮-১০ কেলভিনের উষ্ণতাতেই প্রথম কনডেনসেট তৈরি করেন বিজ্ঞানীরা। সেটা ছিল ১৯৯৫ সাল। এবার ফ্রান্স ও জার্মানির গবেষকরা সর্বনিম্ন ৩৮ পিকো কেলভিন তাপমাত্রায় তৈরি করলেন বোস-আইনস্টাইনের পঞ্চম দশা। তৈরি হল নতুন মাইলফলক।

উল্লেখ্য শুধু উষ্ণতাই, আরও একটি বিষয়েও সাম্প্রতিক এই গবেষণা তৈরি করল নতুন ইতিহাস। আর তা হল স্থায়িত্ব। বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট দশার তৈরির মূল প্রতিবন্ধকতা হল ল্যাবরেটরির চারপাশের পরিপার্শ্ব। পরিপার্শ্ব থেকে শক্তি শোষণের মাধ্যমে ক্রমশ শক্তিস্তর বৃদ্ধি করতে থাকে পদার্থের পঞ্চম দশা। আর তারপরেই ‘একক অণু’-র কাঠামোতে পরিবর্তন আসে দ্রুত। ফিকে হয়ে যায় তার ছবি। 

গত বছর মহাশূন্যেও এই একই দশা তৈরি করেছিলেন ক্যালটেক প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা। তার স্থায়িত্ব ছিল প্রায় এক সেকেন্ড। সাম্প্রতিক গবেষণা ছাপিয়ে গেল সেই রেকর্ডকেও। জার্মানির ব্রেমেনে তৈরি করা পঞ্চম দশা টিকে থাকল প্রায় ২ সেকেন্ডেরও বেশি সময়। এই কৃতিত্বের পিছনে অন্যতম অবদান রয়েছে হ্যানওভারের লিবনিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আর্নেস্ট রাশেলের। ম্যাগনেটিক লেন্সিং-এর মাধ্যমে তিনি ১১০ মিটার দীর্ঘ ড্রপ টাওয়ারের মধ্যে দিয়ে পরিচালিত করেন রুবিডিয়াম অণুকে। আর তার ফলেই অবাধে পতনশীল সেই পদার্থের স্থায়িত্বই বৃদ্ধি পায় কয়েকগুণ। তবে এই প্রযুক্তিতে বেশ কিছু বদল আনলে, স্থায়িত্ব ১৭ সেকেন্ড পর্যন্ত হতে পারে বলেই আশাবাদী তিনি। 

আরও পড়ুন
হাবল টেলিস্কোপে ধরা দিল দূরতম আইনস্টাইন বলয়

তবে এই গবেষণার গুরুত্ব এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং, আগামীদিনে কোয়ান্টাম দশা, মহাকর্ষীয় তরঙ্গ-সংক্রান্ত একাধিক পদার্থবিজ্ঞানের রহস্যের সমাধান দিতে পারে বোস-আইনস্টাইনের তত্ত্বের প্রামাণ্য পরীক্ষা। সমাধান দেবে মহাশূন্যের সংকোচন, প্রসারণ এবং ডার্ক এনার্জির তত্ত্বেরও। ফলত, সাম্প্রতিক সাফল্যকে পদার্থবিদ্যার জগতে একটি বড়ো মাইলস্টোন হিসাবেই দেখছেন গবেষকরা…

আরও পড়ুন
ব্ল্যাকহোল থেকে আলোকরশ্মির নির্গমন! প্রমাণ মিলল আইনস্টাইনের তত্ত্বের

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
অলস মস্তিষ্কেই আপেক্ষিকতা তত্ত্ব আবিষ্কার আইনস্টাইনের, সুফল পেয়েছিলেন স্টিভ জোবসও!