আইরিস ক্লাবের জার্সিতে বব মার্লের হাস্যমুখ, ফুটবলের সঙ্গে হাত মেলাল সঙ্গীত!

সাদা টি-শার্টের ওপরে এক পাশে জলছাপে আঁকা বব মার্লের (Bob Marley) হাস্যমুখ। অন্যপাশে উপর নিচে বিস্তৃত সবুজ-হলুদ-লাল রঙের স্ট্রাইপ। বব মার্লের দৌলতেই এই রং মিশেলের সঙ্গে সকলেই পরিচিত আমরা। হ্যাঁ, জামাইকার অতিপরিচিত জাতীয় পতাকারই আদল এই মিশেল। তবে এই জামা সাধারণ কোনো টি-শার্ট নয়। তা একটি ফুটবল ক্লাবের জার্সি (Jersey)! এবং আরও আশ্চর্যের বিষয় হল, ক্লাবটি জামাইকার নয়। বরং, আয়ারল্যান্ডের (Ireland)। 

হ্যাঁ, সম্প্রতি এমনই এক অভিনব জার্সি প্রকাশ করল ডাবলিনের (Dublin) আইরিশ ফুটবল ক্লাব ‘বোহেমিয়ানস’ (Bohemians)। যা ডাবলিনের প্রাচীনতম ফুটবল ক্লাবও বটে। খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে হঠাৎ আইরিশ ক্লাবের জার্সিতে জামাইকার কিংবদন্তি শিল্পীর ছবি ছাপা হল কেন? তাতে জামাইকার পতাকারই বা ব্যবহার কেন? 

আজ থেকে প্রায় চার দশক আগের কথা। ১৯৮০ সাল সেটা। ৬ জুলাই এই ক্লাবের স্টেডিয়াম, ডেলিমাউন্ট পার্কেই আয়োজিত হয়েছিল রেগে আইকন বব মার্লের আউটডোর কনসার্ট। আয়ারল্যান্ড তো বটেই, সেই কনসার্টই ছিল বব মার্লের শেষ লাইভ কনসার্ট। অনুষ্ঠানের কয়েক মাস পরেই মাত্র ৩৬ বছর বয়সে ১৯৮১ সালে না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। তবে আইরিশ ক্লাবটির সঙ্গে তৈরি হয়ে যায় তাঁর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক।

হ্যাঁ, শুধু কনসার্ট নয়। সেদিন ভোরবেলায় সাউন্ড চেক করতে গিয়ে ক্লাবের খেলোয়াড়দের সঙ্গে ক্লাব গ্রাউন্ডে দাপিয়ে ফুটবলও খেলেছিলেন ওয়েলারসরা। ছিলেন স্বয়ং বব মার্লেও। মার্লে নিজেও যে ছিলেন ফুটবলভক্ত। ইউরোপ ট্যুরের সময় স্কটিশ ক্লাব সেল্টিকের খেলা দেখতে মাঠে প্রায়ই হাজিরা দিতে দেখা যেত তাঁকে। এমনকি এই ক্লাবে জায়গা পাওয়ার জন্য মিডফিল্ডার হিসাবে পরীক্ষাও দিয়েছিলেন মার্লে। 

আরও পড়ুন
গৃহযুদ্ধে বিরতি, আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট ঘিরে ঐক্যবদ্ধ ক্যামারুন

’৮০ সালে ‘বোহেমিয়ানস’-এর তরফে কনসার্টের আবেদন করা স্রেফ ফুটবলকে ভালোবেসেই এক ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী। শুধু শর্ত ছিল একটাই, টিকিটের মূল্য হতে হবে সাশ্রয়ী। যাতে দরিদ্র সঙ্গীতানুরাগীরাও অনায়াসেই অংশ নিতে পারেন এই কনসার্টে। এমন এক ব্যক্তিত্বের সামনে মাথা ঝুঁকে আসার কথা স্বাভাবিকভাবেই। পরবর্তীকালে অলিখিত ভাবেই আইরিশ ক্লাবটির অ্যানথেম হয়ে উঠেছিল বব মার্লের লেখা ‘থ্রি লিটল বার্ডস’ গানটি। এবার তাঁকে জার্সিতে জায়গা করে দিয়ে অভিনব শ্রদ্ধা জানাল ক্লাব কর্তৃপক্ষ। 

আরও পড়ুন
ফুটবল ক্লাবের নাম ‘বেঙ্গল’, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও রাজত্ব বাঙালিদের?

কিছুদিন আগে একইরকম উদ্যোগ নিয়েছিল ডাচ ক্লাব আয়াক্সও। তাদের জার্সিতেও জায়গা পেয়েছিল বব মার্লের প্রতীক ওই ‘তিনটি পাখি’। সেই জার্সি বাজারে বিকিয়েছে দেদার। বোহেমিয়ানের জার্সিও যে তেমনই জনপ্রিয়তা পাবে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। কিন্তু মার্লের আদর্শকে মাথায় রেখেই ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ক্লাবের জন্য রেখে বাকিটা বিলিয়ে দেওয়া হবে উদ্বাস্তুদের মধ্যে। আর সেটা খরচ হবে ডাবলিন শহরের গৃহহীন সঙ্গীতশিল্পীদের বাদ্যযন্ত্র কিনে দেওয়ার কাজে। 

আরও পড়ুন
রবি-সন্ধ্যায় ‘নাটকীয়’ ফুটবল ফাইনাল, বাজিমাত করল কারা?

আজ প্রায় চার দশক হয়ে গেছে পৃথিবী ছেড়েছেন বব মার্লে। অথচ, সঙ্গীতের দুনিয়ায় এখনও অমর হয়ে রয়েছেন তৃতীয় বিশ্বের প্রথম সুপারস্টার। তাঁর স্মরণে এমন একটি উদ্যোগকে সাধুবাদ না জানিয়ে উপায়ই বা কী? 

Powered by Froala Editor