দৃষ্টিহীনতা নিয়েও দু’বার রাষ্ট্রপতি পদক জিতেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী

ইচ্ছে থাকলে অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখাতে পারে মানুষ। যুগ-যুগান্ত ধরে চলে আসা এই কথাটিই আবার সত্যি প্রমাণিত করেছেন কাঞ্চন গাবা। ২ বার রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত, পেশায় উকিল, টার্নস্টোন গ্লোবাল এনজিও-র সদস্য বছর চল্লিশের কাঞ্চন গাবার সংগ্রামটা আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতো ছিল না। মাত্র ৮ বছর বয়সেই তাঁর চোখে গ্লুকোমা ও রেটিনা ডিটাচমেন্ট ধরা পড়ে। পৃথিবী ভালোভাবে দেখার আগেই সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন হয়ে যান তিনি।

১৯৮৪-র এক সকালে, পাঞ্জাবি দম্পতির বছর আটের মেয়ে কাঞ্চন ঘুম থেকে উঠে আবিষ্কার করেন, তিনি আর চোখে দেখতে পাচ্ছেন না। ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে জানা যায়, তাঁর চোখের পিছনের দিকের টিস্যু শুকিয়ে গেছে। ফলে চোখ অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাচ্ছে না। তারই ফল অন্ধত্ব।

এরপর শুরু হয় আরেক সংগ্রাম। ক্যালকাটা ব্লাইন্ড স্কুলে ভর্তি হন তিনি। মনের জোরে ক্লাস টেনের বোর্ড পরীক্ষায় বিশেষ ভাবে সক্ষম ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে থেকে প্রথম স্থান অধিকার করলেন। লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ থেকে স্নাতক হয়ে ভর্তি হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে, আইন পড়ার জন্যে। এলএলবি শেষ করে ২০০৮-এ শেষ করেন পিএইচডি-ও।

রাষ্ট্রপতি শঙ্কর দয়াল শর্মার থেকে পেয়েছিলেন 'বেস্ট গার্ল গাইড' পুরস্কার, ১৯৯৪ সালে। ২০১১ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিলের থেকে পান 'রোল মডেল' পুরস্কার।

শুধু তাই নয়, কাঞ্চন পর্বতারোহণও করেছেন দৃষ্টিহীনতা নিয়েই। পর্বতারোহণ করলেও কোনদিন পর্বত দেখার সৌভাগ্য তাঁর হয়নি। নিজেই রসিকতা করে বলেন, মাটি থেকে অনেক ওপরে থাকলেও তাঁর পর্বতারোহণে কোনো ভয় লাগেনি, কারণ তিনি কত উপরে আছেন তা বোঝার জন্য দৃষ্টিশক্তি ছিল না। 

অন্যদের কথা বাদই দিন, নিজের সাফল্যে মাঝেমধ্যে অবাক হন কাঞ্চন নিজেও। স্বভাব লাজুক যে মেয়েটি স্কুলে প্রশ্নের উত্তর দিতে ভয় পেতেন, তিনি আজ আদালতে বিচারের জন্য লড়াইও করছেন। পৃথিবীর আলো নিভে গিয়েছিল যাঁর চোখ থেকে, অন্যদের আশার আলো দেখাতে কোনো সমস্যাই হচ্ছে না তাঁর।