খাবারের সঙ্গে পাখির ভিতরে যাচ্ছে প্লাস্টিকও, চিন্তিত পরিবেশবিদরা

প্রকৃতিতে দূষণের মাত্রা বিপদসীমা পার করে গিয়েছে আগেই। আর তার ভয়ঙ্কর ফলাফলের সাক্ষী থাকছে বর্তমান সময়। জীবজন্তুর খাবারের মধ্যে কীটনাশক ও অন্যান্য বিষের উপস্থিতি তো ছিলই, সেইসঙ্গে যোগ হয়েছে প্লাস্টিক। হ্যাঁ, খাদ্য বলে ভুল করে প্লাস্টিক খাচ্ছে অনেক প্রাণী। আর সম্প্রতি ইংল্যান্ডের একটি বিশেষ প্রজাতির পাখির উপর সমীক্ষা চালিয়ে তার পরিমাণ দেখে অবাক বিজ্ঞানীরা। 'ডিপার' নামের এই পাখির প্রজাতিটির প্রতিদিনের খাবারের মধ্যে মিশে থাকছে অন্তত ২০০টি ছোট প্লাস্টিকের টুকরো।

৫ মাইক্রন বা তার থেকে সূক্ষ্ম প্লাস্টিকের অণুকে বলা হয় মাইক্রোপ্লাস্টিক। সাম্প্রতিক বেশ কিছু সমীক্ষায় ধরা পড়েছে সমুদ্রের বুকে জমে থাকা বিপুল পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিকের নমুনা। তার মধ্যে আছে পলিয়েস্টার, পলিপ্রপাইলিন, নাইলনের মতো বিষাক্ত প্লাস্টিক অণুও। আর এই প্লাস্টিক যে খুব তাড়াতাড়ি খদ্যশৃঙ্খলের মধ্যেও জায়গা করে নিতে চলেছে, সে সন্দেহ ছিল আগেই। কিন্তু তার এমন ভয়ঙ্কর নমুনা হাতে আসবে, সেকথা ভাবেননি কেউই।

সমুদ্র এবং নদীর জলের প্লাস্টিক অণু প্রথম জায়গা করে নেয় জলজ অণুজীবের শরীরে। আর স্বাভাবিকভাবেই সেইসব পোকামাকড়ের সঙ্গে খাদ্য হিসাবে প্লাস্টিক গ্রহণ করে বিভিন্ন মাছ এবং পাখি। তেমনই একটি পাখি ডিপার। ইংল্যান্ডের উপকূল অঞ্চলের বাসিন্দা এই পাখি খাদ্য সংগ্রহ করে সমুদ্রের গভীর থেকে। আর তার ফলে খাবারের মধ্যে প্লাস্টিকের উপস্থিতি প্রত্যাশিত। এই নিয়েই গবেষণা করছিলেন কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। বেকন শহর থেকে সেভার্ন এস্টুয়ারি পর্যন্ত ১৪-১৫টি অঞ্চল থেকে ১৬৬টি খাবারের নমুনা সংগ্রহ করেন গবেষকরা। আর তাতে দেখা যায়, একটি পাখির প্রতিদিনের খাবারের মধ্যে প্লাস্টিক অণুর পরিমাণ অন্তত ২০০টি। এমনকি শিশুদেরও একই খাবার দিচ্ছে তাদের বাবা-মা। আর এর ফল যে অতি মারাত্মক হতে চলেছে, সেবিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।

কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন অধ্যাপক স্টিভ অর্মেরোড। তাঁর মতে, শহরাঞ্চলেই দূষণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এবং সমুদ্রের থেকে নদী উৎসের খাবারে প্লাস্টিকের পরিমাণ বেশি। আর এর বেশিরভাগটাই আসে বস্ত্রশিল্প এবং নির্মাণ শিল্পের বর্জ্য পদার্থ থেকে। এইসমস্ত শিল্পে প্লাস্টিকের ব্যবহারের ফলে বৈপ্লবিক উন্নতি সম্ভব হয়েছে, একথা ঠিক। কিন্তু তার ফলাফল ভবিষ্যতের জন্য খুব একটা ভালো নয়। খাদ্যশৃঙ্খলে প্লাস্টিকের উপস্থিতির অর্থ তা মানুষের শরীরেও পৌঁছে যাবে খুব তাড়াতাড়ি। আর তখন ঠিক কতধরণের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, তার সঠিক হিসাব নেই কারোর কাছেই। তাই এবার সচেতন হওয়ার সময় এসে গিয়েছে। মানুষকে বেঁচে থাকতে গেলে প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতেই হবে। আর তার জন্য প্লাস্টিক দূষণকে প্রতিরোধ করা আশু কর্তব্য।