বাঙালির গবেষণায় আলোর সন্ধান, প্রাচীনতম রশ্মির খোঁজ দিল ভারতের উপগ্রহ

এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে আমরা যতটুকু চিনেছি, তার সবটাই সম্ভব হয়েছে আলোর অস্তিত্বের কারণে। অথচ এই আলোর উৎস কোথায়, সেটাই এখনও অজানা বিজ্ঞানীদের কাছে। প্রাচীন ধারণা অনুযায়ী মানুষের চোখে আলোর সৃষ্টি হয় না, আলো সৃষ্টি হয় শক্তির রুপান্তরের মাধ্যমে। কিন্তু প্রথম কীভাবে আলো জন্ম নিল, কেন আলোর সৃষ্টি ঘটল; এই সব প্রশ্নের উত্তর হয়তো আর খুব দূরে নেই। অন্তত এক বাঙালি বিজ্ঞানীর গবেষণার সূত্র ধরে আমরা সেই রহস্যের সমাধানের খুব কাছে পোউঁছে গিয়েছি বলেই মনে করা হচ্ছে। পুণের ইন্টার-ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স-এর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর কনক সাহার গবেষণা সন্ধান দিল এখনও পর্যন্ত ব্রহ্মাণ্ডের বুকে খুঁজে পাওয়া সব থেকে পুরনো আলোকরশ্মির। আর সেই রশ্মি এসেছে পৃথিবী থেকে ৯৩০ কোটি আলোকবর্ষ দূর থেকে। অতএব ৯৩০ কোটি বছর আগে সেখানে কী ঘটেছে, তার অনেক তথ্যই এই আলোর নমুনা থেকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব।

সম্প্রতি নেচার অ্যাস্ট্রোনমি পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণাপত্রে কনক সাহা ও তাঁর সহকর্মীরা দাবি করেছেন, নাসাড় অতি শক্তিশালী হাবল স্পেস টেলিস্কোপ যে কাজ করতে পারেনি, ভারতে দুর্বল প্রযুক্তির কৃত্রিম উপগ্রহ অ্যাস্ট্রোস্যাট সেই কাজটাই করে দেখিয়েছে। তাঁদের দাবি ২০১৬ সালে সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল এই উচ্চ ক্ষমতার অতিবেগুনি রশ্মির। আলোর রশ্মিটি এসেছে হাবল টেলিস্কোপ চিহ্নিত ‘হাবল এক্সট্রিম ডিপ স্পেস’-এর মধ্যে অসংখ্য নক্ষত্রপুঞ্জের একটি, ‘এইউডিএফএস০১’ থেকে। আইইউকার অধিকর্তা অধ্যাপক সোমক রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত এর থেকে প্রাচীন কোনো আলোকরশ্মির নমুনা পাওয়া যায়নি। ভবিষ্যতে পাওয়া গেলে গবেষণার কাজ আরও খানিকটা এগোবে।

এই ব্রহ্মাণ্ডের জন্মের সময়, অর্থাৎ বিগ-ব্যাং-এর সময় আলোর কোনো অস্তিত্বই ছিল না। ক্রমশ কীভাবে আলোর জন্ম হল, সে এক রহস্য। আর এই রহস্যের উত্তর দিতে পারে সেইসময়ের কোনো ঘটনার নমুনা, যা পাওয়া যাবে তখনকার আলোর মধ্যেই। কিন্তু এইসমস্ত আলো দৃশ্যমান রশ্মি নয়। আর তাই বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছতে পারে না প্রাচীন এই সমস্ত আলো। তাই তাদের খুঁজে পেতে হলে পৌঁছে যেতে হয় মহাকাশে। কিন্তু মহাকাশে অসংখ্য শক্তিশালী দূরবীক্ষণ যন্ত্র যে কাজ পারেনি, ভারতের একটি সামান্য উপগ্রহ সেই কাজ করতে পেরেছে, এমনটা ভাবতে সত্যিই অবাক লাগে। আর তাই হয়তো সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ সহ গবেষণাপত্র প্রকাশিত হতে লেগে গেল প্রায় ৪ বছর। তবে কনক সাহার ভূমিকা যে আরেকবার বিজ্ঞানের জগতে বাঙালির সাফল্যের পরিচয় রাখল, সেকথা বলাই বাহুল্য।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
চাঁদে পাঠানো হবে রোভার, ইসরোর গবেষণায় জড়িয়ে যাদবপুরের দুই অধ্যাপকও