পাখি বাঁচানোর তথ্যচিত্র বানিয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বঙ্গসন্তানের

শহরের আকাশ থেকে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে পাখিদের অস্তিত্ব। পরিবেশ দূষণ তো রয়েছেই, সেইসঙ্গে বিদ্যুতের তারে বা ঘুড়ির সুতোয় আঘাত পেয়ে মৃত্যু হচ্ছে অনেকের। রাস্তার ধারে অবহেলায় পড়ে থাকা সেই পাখিদের দিকে তাকানোর সময় নেই ব্যস্ত মানুষের। তবে তার মধ্যেই এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন দিল্লি শহরের দুই ভাই। বিগত ২০ বছর ধরে তাঁরা শহরের নানা প্রান্ত থেকে আহত পাখিদের নিয়ে আসছেন নিজেদের বাড়িতে। আর চিকিৎসার পর আবার ফিরিয়ে দিচ্ছেন আকাশের বুকে। মহম্মদ সাউদ এবং নাজিম শাহজাদের এই কাজ নিয়েই তৈরি ৯১ মিনিটের তথ্যচিত্র ‘অল দ্যাট ব্রিদস’ (All That Breathes)। সম্প্রতি সান্ডেনস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বিশ্ব তথ্যচিত্র বিভাগে সেরার স্বীকৃতি পেল পরিচালক শৌনক সেনের (Shounak Sen) এই তথ্যচিত্র।

শহরের আকাশে পাখিদের বিপন্নতাকে তুলে ধরেছেন পরিচালক। তুলে ধরেছেন তাদের নতুন প্রাণ ফিরে পাওয়ার প্রক্রিয়াকে। কিন্তু শুধু এটুকুর মধ্যেই বোধহয় বেঁধে ফেলা যায় না তথ্যচিত্রটিকে। থমকে যেতে হয়, যখন এক আহত চিলের চিকিৎসা চলাকালীন দুই ভাইয়ের সহকারী আশঙ্কা নিয়ে প্রশ্ন করেন, ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে যদি পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে পাখিদের কী হবে? আতঙ্ক অমূলক নয়, বোঝা যায় যখন পরের দৃশ্যেই একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম দুই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে বলতে পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের কথা উল্লেখ করে। পাখিরা এখানে এক বিপন্ন জীবনের প্রতিনিধি। বর্তমান পরিস্থিতিতে যে জীবন এক অনন্ত আকাশের সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে।

একইভাবে তথ্যচিত্রটিতে বারবার উঠে এসেছে সাময়িক নানা সমস্যার কথা। হিন্দু-মুসলমান ধর্মীয় দাঙ্গার প্রসঙ্গ থেকে ছুঁয়ে গিয়েছে নাগরিক পঞ্জী সংশোধনী আইনের কথাও। ৩ বছর ধরে চলেছে এই তথ্যচিত্র তৈরির কাজ। তবে পুরোটাই আবর্তিত হয়েছে মহম্মদ সাউদ এবং নাজিম শাহজাদের বাড়ির গ্যারেজের পাশের একটি ছোট্ট ঘরে। ২০ বছর আগে সেখানেই দুই ভাই শুরু করেছিলেন একটি আহত চিলের চিকিৎসা। চিলটিকে নিয়ে তাঁরা প্রথমে একটি পাখি চিকিৎসাকেন্দ্রে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে ফিরে আসতে হয়। চিল মাংসাশী পাখি, এই অজুহাতে তার চিকিৎসা করা হয় না। তারপর থেকে দুই ভাই শহরের সমস্ত আহত পাখিদের দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন নিজেদের কাঁধে।

পাখিদের ঠিকানা আকাশ। যে আকাশের কোনো সীমানা হয় না। তবে মানুষের সীমাহীন আধিপত্যের আকাঙ্কা আকাশকেও বাদ দেয়নি। বিরাট পৃথিবীর বুকে প্রাণীদের অস্তিত্ব হয়ে আসছে সীমিত, খণ্ডিত। এই বাস্তবতার বাইরে বেরিয়ে অসীমের আকাঙ্খাকেই নতুন করে উস্কে দিলেন পরিচালক শৌনক সেন।

আরও পড়ুন
সত্যজিতের পর বার্লিনজয়ী দ্বিতীয় বাঙালি তিনি, প্রয়াত পরিচালক নৃপেন গঙ্গোপাধ্যায়

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
'মানিকবাবুর মেঘ' নিয়ে ইউরোপযাত্রা তরুণ পরিচালকের