মাতৃভাষার অধিকারের দাবি, রাস্তার ধারে ২০ ঘণ্টা ধর্না মারাঠি সাহিত্যিকের

শুক্রবার সকালে ঘুম ভাঙতেই শহর মুম্বাই দেখল রাস্তার ধারে ধর্নায় বসে আছেন একজন মহিলা। মানুষটি অপরিচিত নন। সাহিত্যিক শোভা দেশপাণ্ডেকে তাঁর সাহিত্যের জন্য মারাঠি ভাষাভাষীর মানুষ চেনেন। লেখিকাকে ভালোবাসেন। কিন্তু কেন হঠাৎ রাস্তার ধারে ধর্নায় বসে আছেন তিনি? এর উত্তর খুঁজতে গিয়েই উঠে এল ভাষা-আধিপত্যের অতি পুরনো একটি বিতর্ক। আগের দিন একটি সোনার দোকানে গয়না কিনতে গিয়েছিলেন শোভা দেশপাণ্ডে। মুম্বাই শহরের বুকে একটি দোকানে তিনি নিজের মাতৃভাষা মারাঠিতেই কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দোকানের মালিক শঙ্করলাল জৈন জানিয়ে দেন তিনি মারাঠি ভাষা জানেন না। অতএব কথা বলতে হবে হিন্দিতেই। শোভা দেশপাণ্ডে আপত্তি জানালে তাঁকে রীতিমতো হেনস্থা করে বের করে দেওয়া হয় দোকান থেকে।

দোকান থেকে বেরিয়ে এসেই রাস্তার ধারে ধর্নায় বসেন মারাঠি সাহিত্যিক। নিজের রাজ্যে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার দাবি করেছেন তিনি। এমন পরিস্থিতি অবশ্য কোথাও খুব বিরল নয়। হিন্দি বলয়ের ভাষা ক্রমশ বাংলা সহ দেশের নানা আঞ্চলিক ভাষাকে গিলে খাচ্ছে। শহর কলকাতাতেও এমন ছবি প্রায়ই চোখে পড়ে। এমনকি বাঙালিরাও রাস্তাঘাটে এবং দৈনন্দিন জীবনে হিন্দিতে কথা বলতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন। আর ব্রিটিশদের ইংরেজি ভাষার আধিপত্যের ইতিহাস তো বহু পুরনো। দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে যদিও চেহারাটা খানিকটা অন্যরকম। সেখানে মানুষের সচেতনতার কারণেই ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষেত্রেই বাধ্য হয়ে আঞ্চলিক ভাষা শিখে নিতে হয়। মহারাষ্ট্রের বুকেও একই দাবি তুললেন শোভা দেশপাণ্ডে। তবে বাংলার বুকে এমন দাবি কেন চাপা পড়ে যাচ্ছে? এই প্রশ্নও তুলছেন অনেকে।

শোভা দেশপাণ্ডে জানিয়েছেন, দোকান থেকে বেরিয়েই তিনি মুম্বাই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই অফিসারও দোকান মালিকের পক্ষ নিয়েই কথা বলেছিলেন। ফলে বাধ্য হয়েই ধর্নায় বসেন তিনি। কিন্তু পরের দিন সাহিত্যিকের পাশে সাধারণ মানুষের ভিড় জমা হলে পুলিশের গলার সুর পালটে যায়। ২০ ঘণ্টার অবস্থানের শেষে সাহিত্যিককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য। সাহিত্যিকের পক্ষে দাঁড়ান মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার সদস্যরাও। যদিও তাঁরা সংশ্লিষ্ট দোকান মালিককে শারীরিক নিগ্রহ করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

যদিও এসবের মধ্যেও একটি প্রশ্নকে অস্বীকার করা যায় না। তা হল দৈনন্দিন জীবনে মাতৃভাষার অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি। যদিও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস অটলওয়ালে জানিয়ে দিয়েছেন এরকম কোনো নিয়ম লাগু করা সম্ভব নয়। কিন্তু এর মধ্যেই কি ভাষা আগ্রাসনের প্রচ্ছন্ন বিপদ সংকেত লুকিয়ে থাকছে না? প্রশ্ন রইল পাঠকের কাছেই।

Powered by Froala Editor