দরিদ্রদের হাতে তুলে দিলেন নগদ অর্থ, মানবতার অনন্য নজির অস্ট্রেলিয়ায়

সময়টা বড় মর্মান্তিক। একে তো করোনা ভাইরাসের দাপটে আতঙ্কিত গোটা পৃথিবী। তার মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দারিদ্র্য, অনাহার। হবে নাই বা কেন! ভাইরাসের আতঙ্কে যে স্তব্ধ জনজীবন। আর দিন আনি দিন খাই মানুষগুলোর সামান্য রোজগারের সংস্থানটুকুও যে আর নেই। তার মধ্যেই আশার আলো দেখাচ্ছেন কিছু মানুষ। তাঁদের হাত ধরেই লেখা হচ্ছে মানবতার নতুন ইতিহাস। সম্প্রতি তেমনই এক গল্পের জন্ম দিলেন ৬২ বছর বয়সি এক ক্যাফে মালিক।

আরও পড়ুন
কাঁটাতারের দু’পাশে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা; অপেক্ষা সুসময়ের, লকডাউনেও প্রেমের সাক্ষী পৃথিবী

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরে একটি ছোট ক্যাফে চালান পিট ড্রামোস। কিন্তু করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে লকডাউনে চলে গিয়েছে গোটা শহর। ফলে দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করতে বাধ্য হলেন তিনি। এরপর ঘরে ফিরে যেতেই পারতেন। কিন্তু তিনি তা করলেন না। যা করলেন, তাতে সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছেন এই মানুষটি। সেদিন সকালের সংবাদে তিনি দেখছিলেন, কীভাবে গোটা দেশে দারিদ্র্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। দেখেছেন স্যোসাল সিকিওরিটি অফিসের সামনে খাদ্যের প্রতীক্ষায় দীর্ঘ লাইন। সেই ছবি দেখে তাঁর মন আর্দ্র হয়ে ওঠে। এখন ব্যাঙ্কে যা সঞ্চয় আছে, তাতে বেশ কয়েকদিন নিশ্চিন্তে চলে যাবে। কিন্তু তাঁর অবস্থাও যদি ওই মানুষগুলোর মতো হত!

আরও পড়ুন
শহরের রাস্তায় ঘুরছে পাহাড়ি ছাগল, লকডাউনে একটুকরো ‘মুক্তি’র দৃশ্য

ক্যাফের দরজা বন্ধ করে তিনি আর দেরি করলেন না। সোজা চলে গেলেন ব্যাঙ্কে। তারপর নগদ ১০ হাজার ডলার তুলে নিয়ে হাজির হলেন খাবারের প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর সামনে। প্রত্যেকের হাতে তুলে দিলেন ১০০ ডলারের একটি করে নোট। আর সেইসব দরিদ্র মানুষরা? প্রথমে ঘটনার আকস্মিকতায় ঠিক কিছু বুঝে উঠতে পারেননি। তারপর কান্নায় ভিজে উঠল তাঁদের চোখ। সেখানে একটি নতুন নামও পেয়ে গেলেন তিনি। 'দয়ালু পিট'। সংবাদের শিরোনামেও উঠে এসেছে সেই নাম।

আরও পড়ুন
রক্তের ঘাটতি মেটাতে টানা একমাস রক্তদান শিবির, আয়োজনে কলকাতা পুলিশ

প্রথমে নিজের পরিচয় গোপন রাখতেই চেয়েছিলেন পিট। তারপর ভাবলেন, তাঁর এই উদ্যোগ যদি বাকিদের অনুপ্রাণিত করতে পারে তাহলে তো ভালোই। তাঁর পক্ষে যতটা সম্ভব, তিনি করেছেন। ১০০ ডলারের আর কতটুকু মূল্য! তবে সেই টাকায় চার পাঁচ প্যাকেট খাবারের সামগ্রী কিনে হয়তো কয়েকটা দিন কাটিয়ে দিতে পারবে পরিবারগুলো। কিন্তু তাই বা আর কতদিন! শহরের সমস্ত ধনী মানুষরা যদি এই সময় এগিয়ে আসেন, তাহলে খানিকটা কাজ হবে। সবাইকে সেই আহ্বানও জানিয়েছেন পিট।

আরও পড়ুন
রাস্তার পশুদের খাওয়াতে ৫৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ ওড়িশা সরকারের

ভাইরাসের আক্রমণে আতঙ্কিত, বিপর্যস্ত পৃথিবীতে এভাবেই মানবতার গল্প বুনছেন পিটের মতো অনেকেই। এই গল্পগুলোই তো আগামীর বেঁচে থাকার রসদ। এভাবেই হাতে হাত রেখে আমরা এই কঠিন সময় পেরিয়ে যেতে পারব নিশ্চিত।