বেড়ে উঠেছিলেন পশুপাখির সান্নিধ্যেই, অকালে চলে গেলেন বাঙালি পক্ষী-বিশারদ

পাখি, প্রকৃতিই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। তাঁর হাত ধরে কত মানুষ পাখি চিনতে শুরু করেছিল! চার দশক ধরে চলা তাঁর যাত্রা হঠাৎ করেই শেষ হয়ে গেল। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে চলে গেলেন বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় পক্ষী-বিশারদ কুশল মুখোপাধ্যায়।

শুধুমাত্র একজন অভিজ্ঞ পক্ষী-বিশারদ বললে বোধহয় কুশলবাবুকে ঠিকঠাক চেনা যায় না। তাঁর সংস্পর্শে যারাই এসেছেন, তাঁরাই বলেছেন প্রকৃতির প্রতি তাঁর অদম্য আকর্ষণের কথা। তাই পাখিতেই থেমে থাকেননি তিনি; গাছপালা-পশু-পরিবেশ, সমস্ত কিছু নিয়ে আবর্তিত হয়েছিল জীবন। সাউথ পয়েন্ট স্কুলের এই প্রাক্তনীর এই ভালবাসা শুরু হয়েছিল সেই ছোটোবেলাতে, নিজের বাড়িতে। ময়না, কোকিল, শালিক, হিমালয়ান ম্যাগপাই-সহ নানা প্রজাতির পাখির আস্তানা তো থাকতই। সঙ্গে ছিল বেজি, কুকুর, বিড়াল নিয়ে একেবারে ভরা সংসার। তাদের সান্নিধ্যে বড় হতে হতে কখন যে নিজেই ‘বন্য’ হয়ে গেলেন, টেরই পেলেন না…

পরে অবশ্য নিজেও বলেছিলেন সেই অমোঘ কথা - ‘বন্যেরা বনেই সুন্দর’। আর তাদের রক্ষা করা, চেনা, জানা আমাদের কর্তব্য। সেই বোধ থেকেই তৈরি করেছিলেন ‘প্রকৃতি সংসদ’। পশু-পাখিদের নিয়ে দীর্ঘদিন নানা কাজ করে এসেছে এই সংস্থা। পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী পাখিদের নিয়ে সমীক্ষায় প্রবলভাবে যুক্ত ছিলেন কুশলবাবু। ওয়েটল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল, জুলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, সালিম আলি সেন্টার অফ অর্নিথোলজি-সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

কুশল মুখোপাধ্যায় এবং প্রকৃতি সংসদ— যেন সমার্থক হয়ে গিয়েছিল। নরেন্দ্রপুরের ‘কয়াল বাগান’-এ নানা প্রজাতির পাখির আনাগোনা লক্ষ্য করেছিলেন কুশলবাবু। পরে প্রকৃতি সংসদের উদ্যোগে সেই পাখিদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা প্রকাশিত হয়। আজ এই কয়াল বাগানের রূপ বদলে গেছে। হয়েছে ‘চিন্তামনি কর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণালয়’। শুধু পাকিতেই থেমে থাকেনি এই কাজ। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিড়ালের প্রজাতি, সুন্দরবনের বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির কচ্ছপদের নিয়েও কাজ করেছেন। শুধু সমীক্ষা নয়, কী ভাবে এদেরকে রক্ষা করা যায়, বাঁচানো যায় সেইসবও দেখতেন তিনি।

এসবের পাশাপাশি থাকত ফটোগ্রাফির নেশাও। অবশ্যই, ওয়াইল্ডলাইফ। কুশলবাবুর তোলা ছবি জায়গা করে নিয়েছিল বিবিসি’র কালেকশনেও। সেই সবের পাশেই চলত পরিবেশ নিয়ে ভাবনা চিন্তা। অনেককে হাতে ধরে শিখিয়েছেন কাজ। পাখি চিনিয়েছেন, আলাপ করিয়ে দিয়েছেন গাছপালাদের সঙ্গেও। জানুয়ারির এক বৃহস্পতিবার হঠাৎই সব শেষ করে দিল। মাত্র ৬২ বছরেই থেমে গেলেন কুশল মুখোপাধ্যায়।