গত আড়াই দশকে ৫ শতাংশ ম্যানগ্রোভ হারিয়েছে পশ্চিম ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলি

ম্যানগ্রোভ অরণ্যের প্রসঙ্গ আসলে, প্রথমেই চর্চায় উঠে আসে সুন্দরবন এবং লাতিন আমেরিকায় আমাজন অববাহিকার কথা। তবে সামান্য হলেও তাঞ্জানিয়া, কেনিয়া, মাদাগাস্কার, মোজাম্বিকের মতো ভারত মহাসাগরের পশ্চিম অবস্থিত আফ্রিকান (Africa) দেশগুলিতেও ছড়িয়ে রয়েছে ম্যানগ্রোভ অরণ্য (Mangrove Forest)। যা বিশ্বের মোট ম্যানগ্রোভের প্রায় ৫ শতাংশ। তবে মানব সভ্যতার দৌরাত্ম্যে এবার ধ্বংস হতে বসেছে সেটুকুও। বিগত আড়াই দশকে ৫ শতাংশ ম্যানগ্রোভ হারিয়েছে পশ্চিম ভারত মহসাগরীয় দেশগুলি। সম্প্রতি এমনই তথ্য উঠে এল আন্তর্জাতিক গবেষণায়। 

ওয়েটল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অফ নেচার এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের যৌথ তত্ত্বাবধানে এই গবেষণা চালিয়েছিলেন গবেষকরা। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০২০— স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছিল এই ২৫ বছরের তথ্য। সেই ছবি বিশ্লেষণ করেই নির্ণয় করা হয় ম্যানগ্রোভ বনভূমি হ্রাসের মাত্রা।

গ্লোবাল ম্যানগ্রোভ ওয়াচের গবেষক ও সমুদ্র-বিজ্ঞানী পল এরফতেমাইজার জানাচ্ছেন, বিগত ২৫ বছরে ৩০ হাজার হেক্টর ম্যানগ্রোভ হারিয়েছে আফ্রিকান দেশগুলি। কাঠ সংগ্রহ, কৃষিজমির বিস্তার, বসতিস্থাপন-সহ একাধিক কারণ জড়িয়ে রয়েছে অরণ্য ধ্বংসের পিছনে। তাছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রকোপ বেড়েছে ঝড় ও বন্যার। পরিসংখ্যানের হিসাবে দেখতে গেলে ২০০৭ সাল পর্যন্ত অরণ্যের পরিমাণ মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল গোটা অঞ্চলেই। তবে তার পর থেকেই ক্রমশ ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে ধ্বংসলীলা, অরণ্য-নিধনের মাত্রা। 

সাধারণ গাছের থেকে ম্যানগ্রোভ প্রায় ৫ গুণ কার্বন শোষণ করতে সক্ষম বলেই জানাচ্ছেন গবেষকরা। অর্থাৎ, সবমিলিয়ে ৮৪ কোটি টন কার্বন শোষণ করার ক্ষমতা ছিল পশ্চিম ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের। ২০ কোটি ব্যারেল খনিজ তেল থেকে উৎপন্ন কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সমতুল্য। গবেষকদের মতে, ম্যানগ্রোভ ধ্বংসের কারণে ক্রমশ উষ্ণতা বাড়ছে আফ্রিকার। খরার প্রকোপ বাড়ছে পশ্চিম ভারত মহাসাগরীয় এই দেশগুলিতে। একইসঙ্গে ধ্বংস হচ্ছে বাস্তুতন্ত্রও।

তবে আশঙ্কার বিষয় হল, এই ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণে এখনও পর্যন্ত সেভাবে কোনো পদক্ষেপই নেয়নি সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সরকারগুলি। এমনকি সংরক্ষণ প্রকল্পের জন্য তাদের কাছে বিশেষ কোনো পরিসংখ্যান, তথ্য এবং প্রশাসনিক পরিকাঠামোও নেই বলে দাবি করছেন আন্তর্জাতিক গবেষকরা। তবে স্থানীয় ও প্রাচীন জনগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করলে এই অরণ্যকে নতুন করে পুনরুজ্জীবিত করে তোলা সম্ভব বলেই অভিমত গবেষকদের।

প্রাথমিকভাবে তাঞ্জানিয়ার রুফুজি ডেল্টা এবং মোজাম্বিকের জাম্বেজি ডেল্টার অরণ্যে নতুন করে প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়াই লক্ষ্য গবেষকদের। ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছে ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড। মজে যাওয়া খালগুলিকে সংযুক্ত করা হয়েছে সমুদ্রের সঙ্গে। তাছাড়াও চলছে ১০ কোটি চারা রোপণের কাজ। আগামীদিনে এই প্রকল্পই গ্রিন-ওয়াল হয়ে দাঁড়াবে আফ্রিকার, আশাবাদী গবেষকরা… 

Powered by Froala Editor