অনিয়মিত বর্ষা, দায়ী সুন্দরবনের বাতাসে কার্বনের আধিক্য

বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলার বর্ষার চরিত্রে বেশ বদল দেখা যাচ্ছে। মৌসুমী বায়ু প্রবেশ করার পরেও বৃষ্টি অনিয়মিত। পরিবেশবিদ থেকে সাধারণ মানুষ, সবার কাছেই রীতিমতো চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্ষার অনুপস্থিতি। কিন্তু ঠিক কী কারণে এরকম পরিবর্তন হচ্ছে, তা বুঝতে পারছিলেন না কেউই। বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন ঘটলেও, কোন বিশেষ ঘটনাই এর পিছনে দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি বোস ইনস্টিটিউটের একদল গবেষকের গবেষণায় সেই বিশেষ কারণটির খোঁজ পাওয়া গেল।

সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যে কার্বনের প্রভাব ছড়িয়ে পড়াই অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণ বলে জানাচ্ছে এই গবেষণা। ম্যানগ্রোভ অরণ্যের বাতাসে মিশে থাকা লবণকণা দ্রুত মেঘ জমতে সাহায্য করে। কিন্তু অতিরিক্ত কার্বনের সঙ্গে বিক্রিয়ায় লবণকণার চরিত্র বদলে যাচ্ছে। ফলে মেঘ তৈরির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে বলেই জানিয়েছেন গবেষকরা। দলের অন্যতম গবেষক অভিজিৎ চট্টোপধ্যায়ের মতে, পূর্বঘাট পর্বতমালার ঝুম চাষের প্রভাবে প্রতি বছর প্রচুর ছাই ও কার্বনের কণা উড়ে আসে গাঙ্গেয় উপত্যকায়। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য সেই কার্বনকণা শুষে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বাতাসকে সুরক্ষিত রাখে। কিন্তু এর ফলেই বর্ষার নিয়মিত প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গের জনজীবনকে বাঁচাতে সুন্দরবনের বনভূমির ভূমিকার কথা আমরা আগেও শুনেছি। সম্প্রতি বুলবুলের প্রভাব কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকা রক্ষা পেয়েছে এই বনভূমির কারণেই। কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সুন্দরবন। তবে অভিজিৎবাবুর মতে, অতিরিক্ত কার্বনের হাত থেকে রেহাই পেতে সুন্দরবনের বনভূমির বিস্তারে তো জোর দিতেই হবে, সেইসঙ্গে রাশ টানতে হবে পূর্বঘাট পার্বত্য অঞ্চলের ঝুম চাষে।