বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যে গুরুত্বপূর্ণ জলজ প্রাণীরাও, জানাল প্রেসিডেন্সির ওয়েবিনার

জলজ বাস্তুতন্ত্র— পৃথিবী জুড়ে এই একটি বিষয় আজকাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আর হবে নাই বা কেন! সেই কোন ছোটো থেকে পড়ানো হয় - পৃথিবীর তিন ভাগ জল এক ভাগ স্থল। সেই তিন ভাগ যদি ক্রমশ দূষিত হয়ে পড়ে, তাহলে সেটা তো চিন্তার বিষয়ই বটে! জলজ বাস্তুতন্ত্র কি শুধু জলের প্রাণীদের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে? তা তো নয়। স্থলের জীবরাও তার অংশীদার। কাজেই ক্ষতির সম্মুখীন আমরা সবাই। আজ যদি এই পুরো সিস্টেমকে না জানি, না বুঝি, তাহলে পুরো ব্যাপারটাই অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়ার মতো হয়ে রয়ে যাবে।
 

ঠিক সেই কারণেই জলজ বাস্তুতন্ত্র এবং সেই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে আয়োজিত হল একটি বিশেষ ওয়েবিনার। মেরিন ইকোলজি ল্যাবরেটরি (মেল) এবং অ্যাকোয়াফিল গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন দেশ বিদেশের বহু অধ্যাপক, গবেষক। পাশাপাশি ছিলেন ছাত্রছাত্রীরাও। ১৮ এবং ১৯ জুলাই, দুদিন ধরে এই আলোচনায় উঠে এল এমন কিছু বিষয়, যা নিয়ে শুধু অধ্যাপকদের নয়, সমাজের সকল স্তরের সকল মানুষের ভাবা উচিত। আমাদের চারপাশের পরিবেশকে চেনা উচিত। সর্বোপরি, নিজেদের বেঁচে থাকার জন্য জলজ বাস্তুতন্ত্রকে বোঝা উচিত।

ওয়েবিনারে বক্তব্য রেখেছেন ডঃ শরৎচন্দ্র ত্রিপাঠী, ডঃ সুমিত বিশ্বাস, ডঃ স্যাম ডুপন্ট, ডঃ হৈমন্তী বিশ্বাস, ডঃ চন্দ্রমা মুখার্জি, ডঃ গ্যাব্রিয়েল আয়োনাট প্লাভানের মতো অভিজ্ঞ গবেষক-অধ্যাপকরা। সবারই মূল জায়গা ছিল পরিবেশ রক্ষা। স্যাম ডুপন্ট তুলে আনলেন সমুদ্রের অ্যাসিডিফিকেশনের প্রসঙ্গ। বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার জন্য সমুদ্রের জলে সেই গ্যাস আগের থেকে অনেক বেশি পরিমাণে মিশে যাচ্ছে। ফলে জলের স্বাভাবিক যে পিএইচ বা অম্লতার মাত্রা, সেটা কমে যাচ্ছে। অম্লতার মাত্রা কমে যাওয়া মানে জল আম্লিক হয়ে যাওয়া। ফলে যে প্রাণীগুলো খোলসযুক্ত (যেমন কোরাল, শামুক, ঝিনুক, গুঁড়ি, গুগলি ইত্যাদি) তাদের প্রজাতির মারাত্মক ক্ষতি হবে। একটা সময় সম্পূর্ণ মুছেও যেতে পারে পৃথিবী থেকে। আর এদের ক্ষতি হওয়া মানে এদের ওপর নির্ভর করে থাকা আরও বহু প্রাণীর ক্ষতি হওয়া। এভাবেই বাস্তুতন্ত্রের এক একটা শৃঙ্খল ভেঙে পড়বে।

এই ওয়েবিনারের প্রধান উদ্যোক্তা অধ্যাপক ডঃ সুমিত মণ্ডল প্রহরকে জানালেন, “আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হল ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করা। এই বিষয়টা নিয়েও যে গবেষণা করা যায়, এটা নিয়েও যে পড়া যায় ভবিষ্যতে, সেটা জানাতে হবে। এতে আখেরে আমাদেরই লাভ। আজ ভারত সরকার ব্লু ইকোনমির দিকে জোর দিতে শুরু করেছে। বিশ্বের অনেক জায়গাতেই এই ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। সমুদ্র এবং জলভাগ তো পৃথিবীর অনেকটা ধরে রেখেছে। কাজেই এর স্বাস্থ্য ঠিক করতে না পারলে আমরা সবাই বিপদে পড়ব। এই যে লকডাউনের সময় দূষণ কমে গিয়েছিল, কারখানা বন্ধ ছিল। তার ফলে অনেক প্রাণী কিন্তু আবার পরিবেশে ফিরে এসেছিল। আমরা মুম্বইতে ফ্ল্যামিঙ্গোদের দেখেছি। ওড়িশার বিচে কচ্ছপদের দেখেছি। আসামে কিলব্যাক সাপ দেখেছি। বিশ্বেও এটা হয়েছে। কিন্তু এটা তো ক্ষণস্থায়ী। আমরা, এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম উদ্যোগ না নিলে কিছু তো হবে না।”

আরও পড়ুন
কলম্বিয়ার জঙ্গল বাঁচাতে বিজ্ঞানীদের সহায় প্রাক্তন গেরিলারাই

এরকম ওয়েবিনারের আয়োজনও মূলত সে-কথা মাথায় রেখেই। ভবিষ্যতে আরও আলোচনাসভা আয়োজন করা হবে। নেওয়া হবে অন্যান্য উদ্যোগও। উদ্দেশ্য একটাই, দিনের শেষে মানুষ যেন সচেতন হন। পরিবেশ যেন ফিরে পায় তার স্বাভাবিক পরিস্থিতি...

আরও পড়ুন
বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ভাঙতে চলেছে ৩.৩ মিলিয়ন বছরের রেকর্ড, আশঙ্কায় গবেষকরা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
চলতি বছরে শুধুমাত্র দিল্লিতেই বায়ু দূষণে মৃত ২৪ হাজার, জানাল সমীক্ষা